অস্ট্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও ৪ জন করোনায় আক্রান্ত

ইউরোপ ডেস্কঃ সংবাদ সংস্থা এপিএ এর উদ্ধৃতি দিয়ে অস্ট্রিয়ার জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল Oe24 জানিয়েছেন যে,Kärnten রাজ্যের Hermagor জেলার Kirchbach এর একটি বয়স্ক নার্সিংহোম বা বৃদ্ধাশ্রমে আজ নতুন করে যে ১০ জন করোনায় পজিটিভ সনাক্ত হয়েছেন,তার মধ্যে ৪ জন কিছুদিন পূর্বে করোনা প্রতিরোধের ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছিলেন। সংবাদে অবশ্য বলা হয় নি  তাদের কোন ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছিল।

অস্ট্রিয়ায় বর্তমানে ফাইজার,অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং মডার্নার ভ্যাকসিন প্রদান করা হচ্ছে। নার্সিংহোমের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, আক্রান্ত ৪ জন করোনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সবেমাত্র নিয়েছিলেন। ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের উপসর্গ হালকা হওয়ায় নার্সিংহোমেই আইসোলেশনে আছেন। ১ জনের অবস্থা কিছুটা ক্রিটিক্যাল হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Kärnten রাজ্য থেকে সংবাদ সংস্থা এপিএ এর মুখপাত্র Gerd Kurath ৪ জন ভ্যাকসিন গ্রহণের পরে করোনায় সংক্রমিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে আজ ইউরোপের ৭ টি দেশ তাদের দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান সাময়িক বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছেন। তবে অস্ট্রিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত থাকবে বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনৈক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

যে সমস্ত ইউরোপীয় দেশ এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান সাময়িক স্থগিতের কথা জানিয়েছেন সেগুলি হোল,  ডেনমার্ক, নরওয়ে,গ্রীস,লাক্সেমবার্গ,এবং তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্র এস্তোনিয়া, লাটভিয়া এবং লিথুয়ানিয়া। অস্ট্রিয়াতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনার ভ্যাকসিনের প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ান কর্তৃপক্ষ।

আজ বৃহস্পতিবার ১১ই মার্চ বিকেলে জাতীয় টিকাদান কমিটি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা জন্য ফেডারেল অফিস (বিএএসজি), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন রাজ্যের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মধ্যে এক ভিডিও কনফারেন্সের পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংবাদ মাধ্যম।

অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয় সংবাদ সংস্থা এপিএ কে আরও জানায়,ভিডিও কনফারেন্সে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদিত এবং এর প্রয়োগ বিশ্বব্যাপী সুস্পষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার জন্য সম্পূর্ণ ভ্যাকসিন প্রদান বন্ধ খুব একটি যুক্তিসঙ্গত নয় বলে জানিয়েছেন অধিকাংশ কর্মকর্তা।

আজ অস্ট্রিয়ার বিরোধীদল FPÖ এর চেয়ারম্যান নরবার্ট হোফার এবং এফপিও নেতা ডমিনিক নেপ্প স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডলফ আনস্কোবার কে (গ্রিনস) ডেনমার্কের মতোই অস্ট্রিয়ায় অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের প্রয়োগ স্থগিতের আহবান জানান।

অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের মধ্যে ইতালির বিরোধী দলের ডানপন্থী দল “ফ্রেটেলি ডি ইটালিয়া” (এফডিআই, ইতালির ব্রাদার্স) রোমে সরকারকে ইতালিতে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান সাময়িক স্থগিতের অনুরোধ জানিয়েছেন।

স্পেনের সরকার এই ভ্যাকসিন ব্যবহার অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রনালয়। তাছাড়াও স্পেনে এই পর্যন্ত এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদানের পর রক্ত জমাট বাঁধার কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ক্যারোলিনা দারিয়াস।

জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও আপাতত ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত রেখেছেন,তবে বর্তমানে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। জার্মানিতেও এই পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কোনও রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেনি। জার্মানির বিশেষজ্ঞরাই প্রথম জানিয়েছিলেন যে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ৬৫ বছরের উপরের মানুষের শরীরে তেমন কোন প্রতিরোধের কাজ করতে পারে না।

অস্ট্রিয়ায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার অব্যাহত বৃদ্ধির মধ্যেই রয়েছে। অস্ট্রিয়ার প্রতিবেশী সুইজারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গতকাল এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন যে,আগামী ২২শে মার্চ থেকে অস্ট্রিয়ার ৯টি রাজ্যের মধ্যে শুধুমাত্র সুইস সীমান্তবর্তী Vorarlberg রাজ্য ব্যতীত সমগ্র অস্ট্রিয়া  থেকে কেহ সুইজারল্যান্ডে প্রবেশ করলেই তাকে দুই সপ্তাহের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইন করতে হবে।

এর ফলে সম্ভবত আগামী ২২শে মার্চ থেকে সুইজারল্যান্ডের সাথে অস্ট্রিয়ার সরাসরি রেল যোগাযোগও সাময়িক স্থগিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আজ নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,৯৯৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২২ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৭৫০ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৬৫১ জন,OÖ রাজ্যে ৪৪৮ জন,Steiermark রাজ্যে ৩১৭ জন,Salzburg রাজ্যে ২৫৪ জন,Tirol রাজ্যে ২১৮ জন,Kärnten রাজ্যে ১৭৫ জন,Burgenland রাজ্যে ১৩৪ জন এবং Vorarlberg রাজ্যে ৫০ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।

অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৮৪,৯১৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৮,৭৯৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪,৫০,৮৬২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২৫,২৫৬ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৩২৯ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৫৯৬ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

EuroBanglaTimes

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »