ইউরোপ ডেস্কঃ অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা “টুডে” ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতাল(AKH) থেকে জানিয়েছেন যে,অস্ট্রিয়ার Niederösterreich রাজ্যের Waldviertel জেলার এক ৪৯ বৎসর বয়স্ক নার্স করোনার প্রতিরোধের জন্য অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে,ভিয়েনার জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তরের পর মৃত্যুবরণ করেন।
তার মৃত্যু নিয়ে বেশ রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার মৃত্যুর সাথে ভ্যাকসিনের কোন সম্পর্কে আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখার ঘোষণা দিয়েছেন বলে পত্রিকাটি জানিয়েছেন।
অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছেন,আজ অস্ট্রিয়ার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি গুজব ভাইরাল হয়েছে যে,করোনার ভ্যাকসিন নেয়ার পর নার্সের মৃত্যু হয়েছে। NÖ রাজ্যের পত্রিকা “NÖ Nachrichten” তাদের অনলাইন প্রকাশনায় রিপোর্ট করেছেন যে,রাজ্যের জ্বেটলার স্টেট ক্লিনিকের (Zwettler Landes Klinikum) একজন ৪৯ বৎসর বয়স্ক নার্স অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জানা গেছে।
পত্রিকাটির স্থানীয় প্রতিবেদক জানান,করোনার প্রতিরোধের জন্য উক্ত নার্স অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার ক্রমাগত অবনতি হলে,তাকে ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তাররা আর সেই মহিলার জীবন বাঁচাতে পারেন নি। হাসপাতাল পৌঁছানোর অল্প সময় পড়েই উক্ত নার্স মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
NÖ রাজ্যের স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র বার্নহার্ড জ্যানি সংবাদ মাধ্যমকে জানান,”যেহেতু উক্ত নার্সকে একটি অনুমোদিত প্রতিরক্ষামূলক ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছিল,তাই এখন আমরা তার মৃত্যুর সাথে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের কোন সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
তিনি আরও জানান,নার্সের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর এখন আর হাসপাতাল এমনকি সমগ্র জেলার অনেকেই আর করোনার এই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন নিতে চাচ্ছেন না। তিনি অবশ্য জোর দিয়ে বলেন অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিকের উপরে ভ্যাকসিন প্রদান করা হলেও কোন মৃত্যুবরণের ঘটনা ঘটেনি।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী NÖ রাজ্যের “NÖN” তাদের শনিবারের সংন্ধ্যার প্রকাশনায় জানিয়েছেন যে, Zettel Landesklinikum এর কর্তৃপক্ষ নার্সের মৃত্যুর খবর সংবাদ পত্রে প্রকাশিত হওয়ার পর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই ব্যাপারে মুখ খুলেছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন উক্ত নার্স ভ্যাকসিন নেওয়ার দশ দিন পর রক্ত জমাট বাঁধা রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন এবং আরও একজন নার্স করোনার ভ্যাকসিন নেওয়ার পর পালমোনারি এম্বোলিজম (ফুসফুসের রোগ) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভ্যাকসিনের কারনে মৃত্যুর কারন প্রাথমিক তদন্তে নাকচ করে দিয়েছেন। এখন ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতালের ময়নাতদন্তের পর এই মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হবে বলে সবাই আশা করছেন।
হাসপাতালের একজন মুখপাত্র আজ সংবাদ মাধ্যমকে জানান,করোনার ভ্যাকসিনের নেওয়ার সাথে তার মৃত্যুর কোন যোগসূত্র এখনও পাওয়া যায় নি। তবে সময়ের কাকতালীয় কারণে ভিয়েনা জেনারেল হাসপাতাল এবং ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা মৃত্যুর কারণকে পুরোপুরি পরিষ্কার করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। তদন্তে কিছুটা সময় নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং স্বাস্থ্য ও খাদ্য সুরক্ষা সংস্থা (এজিইএস) ইতিমধ্যে মামলাটিতে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
হাসপাতালের মুখপাত্র আরও বলেছেন, “আমরা রোগীর মৃত্যুর জন্য অত্যন্ত দুঃখিত এবং পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি জানাচ্ছি।”
আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,৫৫৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২৫ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৫২৪ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৫৫৭ জন,Steiermark রাজ্যে ৪৭২ জন,OÖ রাজ্যে ৩৪৯ জন,Salzburg রাজ্যে ২২৩ জন,Kärnten রাজ্যে ১৫৯ জন,Tirol রাজ্যে ১৪৩ জন,Burgenland রাজ্যে ৯২ জন এবং Vorarlberg রাজ্যে ৩৮ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪,৭২,৮৭১ জন এবং মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৮,৬৯৪ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ৪,৪১,৩০৯ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২২,৮৬৮ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৩২২ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৪৫১ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস