ইউরোপ ডেস্কঃ প্যারিস থেকে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এবং জার্মানি থেকে সংবাদ সংস্থা ডয়েচে ভেলে (DW) জানিয়েছেন,গ্লোবাল মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জার্মানিতে দায়ের করা একটি ফৌজদারি অভিযোগে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান এবং বেশ কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করার অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেছেন।
জার্মানির কালসরুহের অন্যতম শীর্ষ কেন্দ্রীয় আদালতে মামলাটি করেছে আরএসএফ৷ খাশগজিকে গুপ্ত হত্যা এবং অন্য সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের পেছনে তার ভূমিকা রয়েছে বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ৷ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে ।
এছাড়াও সৌদি আরবের কারাগারে বন্দি ৩৪ জন সাংবাদিককে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷ জার্মানির এই ফেডারেল আদালতে জার্মান পাবলিক প্রসিকিউটর জেনারেলের কাছে দায়ের করা ৫০০ পৃষ্ঠার অভিযোগে ২০১৩ সালে ইস্তাম্বুলে সৌদি কনস্যুলেটে ৩০ জনেরও বেশি সাংবাদিককে নির্বিচারে আটকে রাখা এবং ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাশোগির হত্যার অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তান্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর খুন হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি।পরে তার লাশ গুম করা হয় বলে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে অভিযোগ করেন তুরস্ক কর্তৃপক্ষ।
জার্মানিতে আরএসএফ এর পরিচালক ক্রিশ্চিয়ান মির এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘‘এটাই হবে জার্মানিতে সৌদি আরবের কারো বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্তের প্রথম ঘটনা৷ আমরা পাবলিক প্রসিকিউটর জেনারেলকে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ,আগের সব তদন্তের নথিপত্র খতিয়ে দেখা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আহ্বান জানিয়েছি৷’’
সংবাদ সংস্থার খবরে নিশ্চিত করা হয়েছে যে,জামাল খাশোগিকে হত্যার ঘটনায় যুবরাজ সালমানসহ সৌদি আরবের আরও চারজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছে এই গ্লোবাল মিডিয়া ওয়াচডগ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ)। খাশগজিকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে যুবরাজ সালমান জড়িত ছিলেন বলে মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের চারদিন পরই এই মামলা দায়ের করা হলো। তবে সৌদি যুবরাজ সালমান ইতিমধ্যে মোহাম্মদ খাশোগির হত্যায় কোনও জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
আরএসএফ ফাইলিংয়ে নামধারী অন্যান্য সৌদি ব্যক্তিত্ব মন্তব্যের জন্য পৌঁছানো যায়নি এবং সৌদি সরকারের মিডিয়া অফিস তৎক্ষণাৎ মন্তব্যের অনুরোধের জবাব দেয়নি। আরএসএফের সেক্রেটারি-জেনারেল ক্রিস্টোফ দেলোয়ার এক বিবৃতিতে বলেছেন, “জামাল খাশোগি হত্যাসহ সৌদি আরবে সাংবাদিকদের নির্যাতনের জন্য দায়ীদের অবশ্যই দায়বদ্ধ হতে হবে।”
আরএসএফ বলেছে যে, এটি সর্বজনীন এখতিয়ারের নীতিমালার কারণে জার্মানিতে মামলা দায়ের করেছে, এই আদালত যে কোনও জায়গায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্য গ্রহণের অনুমতি দেয় এবং পরবর্তী পর্যায়ে অভিযোগে অন্যান্য নাম যুক্ত করা হতে পারেও জানানো হয়েছে। জার্মান প্রসিকিউটরের অফিসের এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন যে,আদালত অভিযোগ গ্রহণ করেছেন এবং এর আইনী প্রক্রিয়া ও সত্যতা মূল্যায়ন করছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিকভাবে এই মামলার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে নি।
আরএসএফ অভিযোগে নাম প্রকাশিত অন্যান্য কর্মকর্তা হলেন সৌদ আল-কাহতানি, যিনি মুকুট রাজপুত্রের ডান হাতের ব্যক্তি হিসাবে দেখা হত; আহমেদ মোহাম্মদ আল-আসিরি, প্রাক্তন রাজকীয় আদালতের উপদেষ্টা; মাহের আব্দুলাজিজ মুতরেব, একজন জেনারেল; খাশোগির হত্যার সময় সৌদি ইস্তাম্বুলের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ আল-ওতাইবি। এই ফাইলিং গত শুক্রবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি ঘোষিত গোয়েন্দা মূল্যায়ন প্রকাশের পরে যা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে যুবরাজ মোহাম্মদ খাশোগিকে “হত্যা বা ক্যাপচার” অভিযানের অনুমোদন দিয়েছে।
এদিকে গত সপ্তাহে প্রকাশিত এই মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনকে কিছু সৌদিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞার কথাও সুপারিশ করা হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দারা বলছে, এই হত্যাকাণ্ডের সাথে তারা জড়িত ছিল। তবে আজ বৃহস্পতিবার “ইউএস টু ডে” তাদের অনলাইন প্রকাশনায় হোয়াইট হাউজের মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে জানান,বাইডেন প্রশাসন এই ব্যাপারে সৌদি যুবরাজ সালমান এবং অন্যান্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস