ভোলা প্রতিনিধি: ভোলার মেঘনা নদীতে অবৈধ চরগড়া বা সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) ব্যবহার করে মাছ শিকার করছেন অসাধু জেলেরা। এই জালের ব্যবহারের কারণে দেশীয় ও বিরল প্রজাতির বিভিন্ন মাছের পোনাও ধরা পড়ছে। অবৈধ জালে যথেষ্ট পোনা মাছ নিধনের কারণে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। অবৈধ এসব জালে সংরক্ষিত বনের গাছ ব্যবহারের কারণে বনাঞ্চলও হুমকিতে রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভোলার মেঘনা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা চর বৈরাগী সহ বিভিন্ন চরে অবৈধ জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করছে একটি অসাধু জেলে গ্রুপ। চর বৈরাগী ও মাঝের চর চ্যানেলের দিকে কমপক্ষে ৩০টি ঘোপ বা চরগড়া দিয়ে ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা ধরা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় অসাধু জেলে। তবে সাধারণ জেলেরা মৎস্য সম্পদ রক্ষায় ও ইলিশ সম্পদ বৃদ্ধিতে অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের চরগড়া, ঘোপ, চিংড়ি, বেহুন্দি ও কারেন্ট জাল বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
জেলেরা জানান, ভোলার মেঘনার মোহনায় অবস্থিত চর বৈরাগী। এই চরে প্রতি শীত মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অবৈধ সুক্ষ ফাঁসের জাল (ঘোপ জাল) বা চরগড়া দিয়ে অবাধে মাছ ধরা হয়। দিনের বেলা ভাটার সময় এইসব চরে নির্দিষ্ট এলাকা জুড়ে খুঁটি ও জাল গেড়ে রেখে দেয় জেলেরা। এরপর রাতের বেলা জোয়ারের পানিতে যখন গোটা চর পানিতে তলিয়ে যায় তখন জাল টেনে বিভিন্ন জাতের মাছ ও পোনা আটকে দেওয়া হয়।
চর বৈরাগীর স্থায়ী বাসিন্দা ও জেলে হারুন, শাহাবুদ্দিন ও কান্টুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর শীত মৌসুমে ভোলার চরগুলোতে কিছু অসাধু জেলেরা চরগড়া দিয়ে মাছ শিকার করে আসছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন সময় তাদের নিষেধ করা হলেও উল্টো তারা ভয়ভীতি দেখায়। শুধু মৎস্য সম্পদ ধ্বংসই নয় এই গড়া জালের জন্য তারা বিভিন্ন দুর্যোগে আমাদের রক্ষাকবচ বনগুলোকেও ধ্বংস করছে।
জেলেরা আরও জানায়, ভোলার বিভিন্ন নদ-নদীতে জেগে ওঠা চরে চরগড়া ও ঘোপ জাল দিয়ে মাছ শিকার করা হচ্ছে। সুক্ষ ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ শিকারের কারণে পোনা মাছ মারা পড়ছে। এতে মৎস্য সম্পদ হুমকির মুখে পড়বে। অবৈধ জালে দেশি বড় মাছের সঙ্গে ধরা পড়ছে বিভিন্ন জাতের পোনা মাছও।
স্থানীয় জেলেরা জানান,এক একটি ঘোপ বা চরগড়া তৈরি করতে গোপনে বন থেকে গেওয়া ও কেওড়া গাছ কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে। কম বয়সী লাঠি আকৃতির গাছ কেটে তৈরি করা হচ্ছে খুঁটি। এভাবে চলতে থাকলে নতুন জন্ম নেওয়া গাছ আর থাকবে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংরক্ষিত বন ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আজাহারুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে ও অবৈধ জাল ধ্বংস করতে তাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, খুব শিগগিরই ভোলাসহ উপকূলের নদ-নদী অবৈধ জালমুক্ত হবে।
সাব্বির আলম বাবু/ইবি টাইমস