ভোলা থেকে,নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ভোলার মনপুরা উপজেলায় দেড় লক্ষাধিক লোকের চিকিৎসা সেবার এক মাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন ডাক্তার দিয়ে কোন মতে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। প্যাথলিজিক্যাল যন্ত্রপাতি,বিদ্যুৎ সমস্যা ও জনবলের অভাবসহ নানান সমস্যায় জর্জড়িত উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স।
মনপুরায় ১ জন ডাক্তার দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে স্বাস্থ্যসেবা। ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করে উদ্ভোধন করা হলেও জনবল সংকট ও প্রয়োজনীয় প্যাথলিজিক্যাল যন্ত্রপাতি এবং বিদ্যুতের অভাবে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৮৩টি পদের মধ্যে ৪৮ টি পদ দীর্ঘদিন পর্যন্ত শূন্য। হাসপাতালটিতে ১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও ১ জন ডাক্তার কর্মরত আছেন । দৈনিক দেড় শতাধিক রোগী দেখছেন ডাক্তার। চরফ্যাশন সদর হাসপাতালের ২ জন ডাক্তার ২ মাস করে মনপুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংযুক্তিতে রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চিকিৎসকের ৯টি পদের মধ্যে ৮টি পদ শূন্য। এর মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া, ডেন্টাল সার্জন, মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার হোমিওপ্যাথিক ও আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ দীর্ঘ দিন শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্সের ১৫ টি পদের মধ্যে ৯টি পদ শূন্য। সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। মিডওয়াইফ ৪টি পদের মধ্যে ৩টি পদ শূন্য। মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট ল্যাব ৫টি পদের মধ্যে ৫টি শূন্য। মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট ডেন্টাল ১টি পদ শূন্য। মেডিক্যাল টেকনোলোজিস্ট রেডিওলোজি এন্ড ইমাজিং ১টি পদ শূন্য। মেডিকেল টেকনোলোজিস্ট এস.এল ১টি পদ শূন্য। ফার্মাসিষ্ট ৪টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। ক্যাশিয়ার ১টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য। স্বাস্থ্য পরিদর্শক ১টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য। পরিসখ্যান পদ কর্মরত থাকলেও তিনি প্রেষনে রয়েছেন।
স্বাস্থ্য সহকারী পরিদর্শক ২টি পদের মধ্যে ২ জন কর্মরত থাকলেও ১ জন প্রেষনে রয়েছেন। স্বাস্থ্য সহকারী ১০টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য। জুনিয়র ম্যাকানিক ১টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ২টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য। সহকারী নার্স ১টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য। সিকিউরিটি গার্ড ২টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য। আয়া ২টি পদের মধ্যে ১টি পদ শূন্য অপর ১জন কর্মরত থাকলেও তিনি প্রেষনে রয়েছেন। অফিস সহায়ক ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদ শূন্য। সুইপার ৫টি পদের মধ্যে ৩টি শূন্য। ওয়ার্ড বয় ৩টি পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য।
জনবল সংকট ও প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাব ও বিদ্যুৎ সমস্যার কারনে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। তাছাড়া প্যাথলজিক্যাল সংক্রান্ত ইন্সট্রুমেন্ট গুলোও পরিচর্যার অভাবে প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে। জনবল সংকট, প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাবে খুড়িয়ে চলছে মনপুরা হাসপাতালের প্রতিদিনকার কার্যক্রম। ডাক্তাররা পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া রোগী দেখছেন। ফলে প্রকৃত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারন মানুষ।
১ জন ডাক্তার প্রতিদিন দেড়শতাধিক রোগী দেখে হাফিয়ে উঠছেন। তাড়াহুরা করে রোগী দেখেন ডাক্তার যার ফলে ভালো চিকিৎসাসেবা পায়না রোগীরা। দুর দুরান্ত থেকে প্রতিদিন রোগী এসে ফিরে যাচ্ছেন। ১ জন ডাক্তার থাকায় সব সময় হাসপাতালে ডাক্তার পাওয়া যায়না। জরুরী বিভাগে রোগী এসে দীর্ঘক্ষন অপেক্ষ করতে হয়।
স্কুলের শিক্ষক মোঃ হুমায়ুন, কুলছুম বেগম, হাজির হাট বাজার ব্যাবসায়ী বায়েজিদ কামাল বলেন, ডাক্তার থাকলেও সঠিক রোগ নির্নয় করার কোন প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির ব্যাবস্থা না থাকায় প্রকৃত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেননা রোগীরা। ভুক্তভোগী মোঃ জসিম হাওলাদার বলেন, আগে হাসপাতালে গরীব রোগীরা ভালো চিকিৎসাসেবা পেতো। এখন আর পাচ্ছেনা। ডাক্তার না থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান খুব খারাপ। এখন হাসপাতালে গিয়ে অনেকক্ষন বসে থাকতে হয়। মুমূর্য রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মত কোন ব্যাবস্থা নেই এই হাসপাতালে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বাসকষ্ট ও ডায়রিয় রোগী মোঃ গোলাম হোসেন খন্দকার বলেন, আমি স্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে ২ দিন ভর্তি ছিলাম। রাত ১টার পর কারেন্ট চলে যায়। পুরো হাসপাতাল অন্ধকারে ছিল। কারেন্ট না থাকায় আমাকে ঠিকমতো কোন নেভুলেজার মিশিন দিয়ে গ্যাস দিতে পারেনি। দিনেও কোন কারেন্ট (বিদ্যূত) থাকেনা। আমরা যারা রোগী হিসেবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে আসি তাদের কষ্টের সীমা থাকেনা। কর্তৃপক্ষ যেন হাসপাতালে সারাদিন-রাত কারেন্ট (বিদ্যুতের) ব্যাবস্থা করেন এই দাবী করছি।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ রাফিদুল ইসলাম বলেন,আমরা হাসপাতালে প্রকৃত সেবা দেওয়ার জন্য আপ্রান চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। তবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসা সেবা দিতে পারলে আরো ভালো হতো। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য চরফ্যাশন সদর হাসপাতাল থেকে ২ জন ডাক্তার মনপুরায় সংযুক্তি রয়েছেন। তারা পালাক্রমে প্রতিমাসে সেবা দিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প.কর্মকর্তা ডাক্তার রেজওয়ানুর আলম বলেন, আমরা আন্তরিকতার সহিত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। এখানে জনবল ও প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে সত্যি। আমাদের প্রধান সমস্যা বিদ্যুত। দিনের বেলায় কোন বিদ্যুতের ব্যাবস্থা না থাকায় আমরা কোন রোগীদের পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে চিকিৎসা সেবা দিতে পারছিনা। বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান এবং ডাক্তার ,নার্স ও জনবল সংকট সমাধান করতে পারলেই আমরা ভালো চিকিৎসা দিতে পারবো।
রাতে ১টার পরে হাসপাতালে কোন বিদ্যুত থাকেনা। মনপুরা দ্বীপের দেড় লক্ষাধিক মানুষের প্রানের দাবী সরকার চিকিৎসা সেবা মানুষের দোড় গোড়ায় পৌছানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল যন্ত্রপাতি, জনবল সংকট সমস্যা সমাধান করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন স্থানীয়রা ।
সাব্বির আলম বাবু /ইবি টাইমস