বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হয়েছেন ১,০১৮ জন
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বৃটিশ দৈনিক পত্রিকা “দি গার্ডিয়ান” জানিয়েছেন,২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের স্বাগতিক দেশ কাতারে গত ১০ বৎসরে স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে যেয়ে এই পর্যন্ত প্রায় ৬,৫০০ বিদেশী শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এই শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ,ভারত, পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কার এবং নেপালের নির্মাণ শ্রমিক। মরুভূমির ও প্রচন্ড গরম আবহাওয়ার মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০২২ আলোচনা-সমালোচনায় ঘেরা একটি ইভেন্ট হয়ে আসছে গত ২০১০ সাল থেকেই যখন কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক ঘোষিত হয়। একে তো দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্বটা বৈধ উপায়ে পায়নি বলে ইতিমধ্যেই প্রমাণ মিলেছে।
অন্যদিকে দেশটি প্রবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলে বহু দিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। ১০ বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পাওয়ার পর এর প্রস্তুতিতে সেখানে সাড়ে ৬ হাজারের বেশী দক্ষিণ এশিয়ান শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
বিশ্বকাপের অনুমতি পাবার পর থেকে কাতারে প্রতি সপ্তাহে গড়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে! এই মৃতদের মধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা ১ হাজার ১৮ জন বলে জানিয়েছে পত্রিকাটি। গার্ডিয়ানের দাবি কাতারে শ্রমিক সরবরাহে বেশী এগিয়ে দুই দেশ হলো ফিলিপাইন ও কেনিয়া। তবে তাদের নাগরিকদের মৃতের সংখ্যার হিসেবটা জানা যায়নি। সে কারণেই কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা অনেক বেশী হবার সম্ভাবনা রয়েছে!
৭টি ফুটবল স্টেডিয়াম, নতুন রাস্তাঘাট, ১টি বিমানবন্দর, অসংখ্য হোটেলসহ বেশ উন্নয়নমুখী কাজ করেছে কাতারে। সেখানে কর্মরত ছিলেন বা আছে কয়েক লক্ষাধিক বিদেশী শ্রমিক। কাতার সরকার দাবি করছে ‘ দেশটিতে শ্রমিকের মৃত্যুর হার এখনো স্বাভাবিকই আছে। কাতারে প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা যে হারে বেড়েছে, সে হারেই মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। এক বিবৃতিতে কাতার সরকার বলেছে, প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখজনক এবং মৃত্যু আটকানোর জন্য আমাদের চেষ্টার কোন কমতি নেই! গার্ডিয়ান আরও লিখেছেন, এই সময়কালে মারা যাওয়া অভিবাসীদের প্রকৃত সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে আরও বেশীই হবে,কেননা এই সময়ে আরও অনেক দেশ থেকেও শ্রমিকরা কাতারের এই নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছে।
কাতারের সরকারী প্রেস অফিস জানিয়েছে যে,বিগত ১০ বৎসরে উপরোক্ত এশিয়ার দেশগুলির সর্বস্তরের ১৪ লক্ষাধিকেরও বেশী লোকের বাস ছিল এই মরুভূমির দেশটিতে। আরও কয়েক লক্ষাধিক শ্রমিক দশ গত বৎসরে কাতারে বসবাস করেছে এবং দেশে ফিরেছেন। একটি “ছোট শতাংশ” এই লক্ষ লক্ষ মানুষের থেকে আলাদা। মৃত্যুর হার এমন একটি পরিসরে রয়েছে যা এই আকার এবং এই জনসংখ্যার সংমিশ্রণের জন্য আশা করা যায়। তাছাড়াও অনেক বিদেশী শ্রমিক অসুস্থ হয়ে কাজ ছেড়ে দিয়ে নিজের দেশে যেয়েও মৃত্যুবরণ করেছেন।
২০২২ বিশ্বকাপটি আয়োজনের জন্য ২০১০ সালে ধনী আমিরাত কাতারকে আবেদনের পর মনোনীত করা হয়েছিল। বিদেশী শ্রমিকদের শোষণের জন্য দেশটি আন্তর্জাতিকভাবে বারবার সমালোচিত হয়ে আসছে। অন্যদিকে কাতারের সরকার বলেছে যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সংস্কার কর্মীদের অবস্থার উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে। মানবাধিকার কর্মীরাও অগ্রগতি স্বীকার করে তবে সতর্ক করে দেয় যে সংস্কারগুলি অপ্রতুলভাবে কার্যকর হয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার মতে, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্য থেকে যারা মারা গিয়েছিলেন তাদের ৬৯% শতাংশকে মৃত্যুর স্বাভাবিক কারণ দেওয়া হয়েছিল। ভারত থেকে আসা শ্রমিকদের মধ্যে এটি ছিল ৮০% শতাংশ। ব্রিটিশ সংবাদপত্র গার্ডিয়ান আরও জানিয়েছেন এই সমস্ত শ্রমিকদের মৃত্যুর কারন হিসাবে বলা হয়েছিল তীব্র হার্ট এটাক ও ফুসফুসের প্রদাহজনিত কারনে।
বিশেষজ্ঞদের মত, গ্রীষ্মকালে কাতারের তীব্র উত্তাপে কাজ করেই সাধারণত শ্রমিকরা এই দুই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অন্যদিকে কাতার সরকার দাবী করছে যে,সরকার গ্রীষ্মের মাসের মধ্যাহ্নের সময় খোলা বাতাসে কাজ করা নিষিদ্ধ করেছে।
বৃটেনের বহুল প্রচারিত ও আন্তর্জাতিক ভাবেও জনপ্রিয় এই গার্ডিয়ান পত্রিকাটি কয়েক বৎসর অনুসন্ধান ও গবেষণার পর এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন। অথচ আন্তর্জাতিক ফুটবল ফেডারেশন ফিফা (FIFA) এই ব্যাপারে গা সাড়া জবাব দিয়েছেন। ফিফাকে এই মৃত্যুর সম্পর্কে বলেন,‘বিশ্বজুড়ে যত নির্মাণকাজ হচ্ছে, সে তুলনায় ফিফা বিশ্বকাপের নির্মাণকাজে দুর্ঘটনার হার বেশ কম। কারণ,এখানে খুব গুরুত্বের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তার বিষয়টা মানা হয়!’
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস