অষ্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করছে
নিউজ ডেস্কঃ আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি ২০২১ সকাল নয়টায় দূতাবাস প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। অতঃপর দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণসহ মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে দূতাবাস প্রাঙ্গণে অস্থায়ীভাবে নির্মিত শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
দিবসের তাৎপর্য নিয়ে ভার্চুয়ালি এক সাধারণ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড-১৯-এর মহামারীর কারণে বিশ্বব্যাপী সামাজিক দূরুত্ব আরোপ করায় আলোচনা অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালিভাবে করতে হয়েছে । সভায় সভাপতিত্ব করেন মান্যবর রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আব্দুল মুহিত,সঞ্চালনায় ছিলেন দূতাবাসের প্রথম সচিব ও দূতালয় প্রধান মোঃ তারাজুল ইসলাম । সভার শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দূতাবাসের সিনিয়র কাউন্সিল কর্মকর্তা জুবায়দুল হক চৌধুরী । এরপর শহিদদের স্মরণে ১ মি.নীরবতা পালন করা হয় । আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে মাননীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর এট্যাস সামসুজ্জামান, মাননীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রীর বানী পাঠ করেন দূতাবাসের কাউন্সিলর মালিহা শাজাহান এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন দূতাবাস ও স্থায়ী মিশনের উপ প্রধান রাহাত বিন জামান ।
ভার্চুয়াল আলোচনায় অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, স্লোভেনিয়া ও স্লোভাকিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, ছাত্র এবং অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন । আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন,অল ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি এম, নজরুল ইসলাম, অষ্ট্রিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার হাফিজুর রহমান নাসিম,সহ সভাপতি আক্তার হোসেন, সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম কবির, রানা বখতিয়ার, রুহি দাস সাহা,অষ্ট্রিয়া বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রবিন মোঃ আলী, মিসেস জান্নাতুল ফরহাদ, মিসেস সুলতানা নাসরিন নাহিদ,প্রবাসী অধিকার আন্তর্জাতিক সংরক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান ইয়াসিম মিয়া বাবু, স্লোভেনিয়ায় প্রবাসী ছাত্র রাকিব হাসান রাফি,হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার ছাত্র- ছাত্রীবৃন্দ ।
আলোচনায় বক্তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনে শহিদদের রক্ত বৃথা যায়নি এবং পাকিস্তানী সরকার শেষ পর্যন্ত বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল। বক্তাগণ বলেন, ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই একটি নতুন জাতীয় চেতনার উদ্ভব হয়েছিল এবং পরবর্তীতে এ চেতনা ধারণ করেই একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করি। বক্তারা প্রবাসে বসবাসরত নতুন প্রজন্মের মাঝে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্বারোপ করেন।
সাধারণ আলোচনার সমাপনী বক্তব্যে মান্যবর রাষ্ট্রদূত প্রথমেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহিদ, ভাষা শহিদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগেই ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং এ স্বীকৃতির মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বে আরও মর্যাদাশীল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি বলেন, একুশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে আমাদেরকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ইউনেস্কো উপলদ্ধি করেছে যে, বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস তাদেরকে কার্যক্রম গ্রহণে সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি দিবসের তাৎপর্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন বিশ্বব্যাপী ভাষা ও সংস্কৃতির সংরক্ষণ এবং বিকাশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে। তিনি সবাইকে একুশের চেতনা ও মূল্যবোধ ধারণ করার আহ্বান জানান।
তিনি আরও বলেন এ বছর কোভিড-১৯ এর মহামারীর কারণে অন্যান্য বছরের মতো ভিয়েনা জাতিসংঘের দপ্তরে দিবসটি উপলক্ষ্যে পূর্বনির্ধারিত অনুষ্ঠান করা সম্ভব হচ্ছে না, তবে বাংলাদেশ দূতাবাস ও স্থায়ী মিশন বাংলাসহ অন্যান্য ভাষায় জাতিসংঘের ভিয়েনা দপ্তরের ভার্চুয়াল পরিদর্শনে UNIS কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে।
সবশেষে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অনুকরণীয় ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রশংসা করে মান্যবর রাষ্টৃদূত বলেন যে, তাঁর নেতৃত্বে হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্যের অধিকারী একটি উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অনুষ্ঠান শেষে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল শহীদ, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের শান্তি-সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
নি প্র /ইবি টাইমস