মুক্তিযুদ্ধ,স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু কে নিয়ে ড. মোঃ ফজলুর রহমানের ধারাবাহিক মতামত। এটি লেখকের নিজস্ব মতামত। এর সাথে ইউরোবাংলা টাইমসের সম্পাদকীয় নীতিমালার সম্পর্ক নেই
শেষ পর্ব
ড. মোঃ ফজলুর রহমানঃ (৭৯)বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিশ্বের অন্যান্য দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো শুধুমাত্র একটি গতানুগতিক যুদ্ধ ছিল না। সুদীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর যাবত বাংলাদেশের অধিকার হারা জনসাধারণ যে সমস্ত লক্ষ্য, আদর্শ এবং মুল্যবোধগুলি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন ও লড়াই করেছেন এবং এহেন সংগ্রাম করতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও নিপীড়ন সহ্য করেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ তারই একটি চূড়ান্ত পর্যায় মাত্র। আর এই সমস্ত মূল্যবোধ তথা আদর্শের স্তম্ভের উপরেই বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটেছে। উপরোল্লিখিত আদর্শ এবং মূল্যবোধগুলো হচ্ছে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং জাতীয়তাবাদ। বিশাল, বিপুল এবং অপরিমেয় ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই সমস্ত মূল্যবোধগুলিই আমাদের মূল সংবিধান তথা ১৯৭২- এর সংবিধানের মূলমন্ত্র বটে।
(৮০)দেশের শিক্ষিত এবং সচেতন নাগরিকগণ জানেন যে, কোন দেশের সংবিধান সে দেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও তার ব্যতিক্রম নহে। তাই বাংলাদেশের সংবিধানও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন হিসেবেই স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত বটে। আর ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাণ পুরুষ এবং ইতিহাসের কিংবদন্তী বঙ্গবন্ধু নিজেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। তাঁর উপরোক্ত ঘোষণা মুজিবনগর সরকার কর্তৃক ১৯৭১ সনের ১০ই এপ্রিল তারিখে প্রকাশিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বর্ণনা ও করা হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের চতুর্থ তফসিল আমাদের সংবিধানের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং অংশ বটে। উক্ত তফসিলে স্বাধীনতার উপরোক্ত ঘোষণাপত্রকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে যথারীতি ধারণ এবং সংরক্ষণ ও করা হয়েছে। আর তা সংরক্ষণ করতে গিয়ে ১৯৭১ সনের ২৬শে মার্চ থেকে ১৯৭২ সনের ৪ঠা নভেম্বর পর্যন্ত সকল কর্মকাণ্ডকে আমাদের সংবিধানের ১৫০ নং এবং ১৫১ নং অনুচ্ছেদে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তাই স্বাধীনতার উপরোক্ত ঘোষণাপত্র সংবিধান ও আইন দ্বারা স্বীকৃত এবং যথারীতি সুসংগঠিত ও সংরক্ষিত বটে।
(৮১)সচেতন ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, সারা পৃথিবীর যে কোন রাষ্ট্রের সংবিধান এমনই একটি মহামূল্যবান গ্রন্থ, যার প্রতিটি শব্দ ও বাক্য এবং বিধি বিধানের প্রতি রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জন্য বিশ্বাস স্থাপন এবং তা অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। তাই আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত উপরোক্ত বক্তব্য সমূহের বিরুদ্ধাচরণ ও নিঃসন্দেহে সংবিধান বিরোধী। আর সংবিধান বিরোধী যে কোন কার্যক্রমই রাষ্ট্র বিরোধী তথা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। যা আমাদের দেশে বিদ্যমান দণ্ডবিধির একাধিক ধারা সমূহের বিধান মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য। তাই এতদসংক্রান্ত সামগ্রিক বিষয় বস্তুসমূহ অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এবং ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে।
(৮২)সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত এবং সুপ্রতিষ্ঠিত উপরোক্ত সত্যের বিপরীতে “বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসঃ দলিলপত্র” গ্রন্থ বিগত ২০০৪ ইং সনে পুনর্মুদ্রণ করতে গিয়ে তৃতীয় খণ্ডে বঙ্গবন্ধুর পরিবর্তে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা হয়েছে। এহেন অবস্থায় দলের প্রতি অন্ধ আনুগত্য প্রদর্শন কিংবা চামচাগিরি অথবা অনাগত ভবিষ্যতে কোন কিছু পাওয়ার আশায় নতুবা তাদের বর্তমান পদ ও পদবি ধরে রাখার ঐকান্তিক প্রত্যাশায় উপরোক্ত পুনর্মুদ্রণের সহিত জড়িত এবং সম্পৃক্ত ব্যক্তিগণ ইচ্ছাকৃত ভাবে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের তৃতীয় অনুচ্ছেদের বরখেলাপ বা বিরুদ্ধচারণ করেছেন বলে খোলা চোখেই পরিলক্ষিত হয়। আর এহেন বরখেলাপ তথা রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধচারণ আমাদের দেশে বিদ্যমান দণ্ডবিধির ১২৩ ক (১) নং ধারার বিধান মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে সন্দেহাতীতভাবে (Undoubtedly and trustworthily) প্রমাণিত হয়। আইন আদালতের সহিত জড়িত এবং সম্পৃক্ত ব্যক্তিমাত্রই জানেন যে, কোন ফৌজদারি অপরাধ কখনো তামাদি বারিত হয় না। তাই উপরোল্লিখিত জ্ঞানপাপীদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির উপরোক্ত ধারার বিধান মোতাবেক যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুযোগ এবং অবকাশ অদ্যাবধি বিদ্যমান রয়েছে বটে।
(৮৩)প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে, উপরোল্লিখিত পুনর্মুদ্রণের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ এবং সংক্ষুব্ধ হয়ে জনৈক বীর মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ এম, এ, সালাম প্রার্থী হয়ে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট (Writ) মামলা নং- ২৫৭৭/২০০৯ দাখিল করেন। উক্ত রিট মামলার প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি (বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি) শ্রদ্ধেয় জনাব এ,বি,এম খায়রুল হক এবং জনাব মমতাজ উদ্দিন আহমেদ –এর ডিভিশন বেঞ্চে বিগত ২০০৯ ইং সনের ২১শে জুন অত্যন্ত যুগান্তকারী এবং ঐতিহাসিক রায় প্রদান করেছেন। জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলা সংবিধান এবং আইনের চোখে অবৈধ বলে উক্ত রায়ে অত্যন্ত পরিষ্কার (Clearly, Categorically & Specifically) ও পরিচ্ছন্নভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরই পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং বাঙালি জাতির জনক হিসেবেও উক্ত রায়ে অকাট্য এবং দ্ব্যর্থহীন্ (Conspicuously & Unequivocally) ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা ছাড়া অন্য সবাই উপরোক্ত যুগান্তকারী রায়কে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে এবং অকুণ্ঠ চিত্তে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
(৮৪)আমাদের পবিত্র সংবিধানের ১১১ নং অনুচ্ছেদে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বর্ণিত রয়েছে- “আপীল বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন হাইকোর্ট বিভাগের জন্য এবং সুপ্রীম কোর্টের যে কোন বিভাগ কর্তৃক ঘোষিত আইন অধস্তন সকল আদালতের জন্য অবশ্য পালনীয় হইবে।” এমতাবস্থায় আমাদের রক্তস্নাত সংবিধানের উপরোক্ত ১১১ নং অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট ভাষ্য মোতাবেক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত রায় আমাদের দেশের সকল নাগরিকদের উপর সম্পূর্ণ আইনানুগভাবেই কার্যকর এবং বাধ্যতামূলক বটে। এর যে কোন প্রকার বিচ্যূতি কিংবা অবজ্ঞা অথবা অশ্রদ্ধা মাননীয় হাইকোর্ট এবং তৎসহ সংবিধান পরিপন্থী বলে উপরোক্ত অনুচ্ছেদের ভাষ্য মোতাবেক যে কোন প্রকার সন্দেহ (Beyond all types of shadow of doubt and controversy) ব্যতিরেকেই প্রমাণিত হয়।
(৮৫)উপরোল্লিখিত সমুদয় তথ্য, তত্ত্ব, উদ্ধৃতি এবং তৎসহ জিয়াউর রহমানের স্বকণ্ঠের ঘোষণা, তাঁর নিজের লেখা আর্টিকেল এবং তিনি রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বেতার ও টি.ভি-তে প্রদত্ত ভাষণ এবং তৎসহ মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত সুচিন্তিত এবং যুগান্তকারী রায়ের আলোকে একথা অকাট্য এবং জোরালোভাবেই তথা সন্দেহাতীতভাবে (Beyond all reasonable doubt and controversy) প্রমাণিত হয় যে, জিয়াউর রহমান আমাদের স্বাধীনতার আদৌ কোন ঘোষক নহেন। বরং তাঁর উপরোক্ত অকপট স্বীকারোক্তি অনুযায়ীই স্বাধীনতার ঘোষক হচ্ছেন কিংবদন্তীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। কিন্তু তা সত্ত্বেও বয়োভারাক্রান্ত এবং স্মৃতিভ্রষ্ট কোন বিদগ্ধ অধ্যাপক; বিবেক বিক্রিকারী প্রথিতযশা কোন সাংবাদিক অথবা কলামিস্ট; সুযোগ সন্ধানী কোন সুচতুর পেশাজীবী কিংবা অনবরত মিথ্যাচারে অভ্যস্ত বাকপটু এবং ধান্ধাবাজ ও চাপাবাজ কোন রাজনীতিবিদ যদি এর পরও প্রকৃত সত্যকে মেনে নিতে না চান কিংবা না পারেন, তাহলে তাদেরকে সত্য প্রত্যাখ্যানকারী, আপাদমস্তক মিথ্যাবাদী এবং সুযোগসন্ধানী জ্ঞানপাপী বলে খুব সহজেই চিহ্নিত করা যায় বটে।
(৮৬)শিক্ষিত এবং সচেতন ব্যক্তিমাত্রই জানেন পবিত্র কোরানের সূরা বাকারার ৪২ নং আয়াতে সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্টভাবে বর্ণিত রয়েছে- “ওয়ালা তালবিসুল হাক্কা বিল বাতিলি ওয়া তাকতুমুল হাক্কা ওয়া আনতুম তায়ালামুন।” অর্থাৎ “তোমরা সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকোনা এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করোনা।” পবিত্র কোরানের উপরোক্ত আয়াতের পাশাপাশি মহানবী (সাঃ) -এর একটি বিখ্যাত হাদীস হলো- “যে ব্যক্তি সত্য কথা বলা থেকে নিরব থাকে সে বোবা শয়তান” । আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলসমূহ ইসলামিক শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চান এবং তৎসহ প্রখ্যাত আলেম ওলামা সহ পীর মাশায়েখগণ পবিত্র কোরানের উপরোল্লিখিত আয়াত এবং তৎসহ মোহাম্মদ (সাঃ) হাদীসের আলোকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষকের প্রশ্নে অতীতের ভুল ভ্রান্তি থেকে সরে আসার ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সমূহ তারা একটু গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখতে পারেন।
(৮৭)স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী অপশক্তি এবং তাদের প্রতিভূরা যদি এর পরও কোনও শিক্ষা গ্রহণ না করেন কিংবা মিথ্যাচার থেকে বিরত ও নিবৃত্ত না হন, তাহলে চিরন্তন বাংলা প্রবাদ “চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী” এবং প্রবচন “যদিও হয় ধর্মের জয়, অধর্ম স্বীকার করেনা পরাজয়”– এর অন্তর্নিহিত ভাষ্য থেকে আমরা সান্ত্বনা খুঁজতে পারি। এরই পাশাপাশি সংবিধান লঙ্ঘন এবং মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত সুচিন্তিত রায়ের আলোকে আদালত অবমাননার অভিযোগে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে যথোপযুক্ত ব্যবস্থাও গ্রহণ করা যেতে পারে বটে। আর তা করা অত্যাবশ্যক এবং অপরিহার্য বলে অত্যন্ত জোরালোভাবেই বিবেচিত হয়। তাই চাপাবাজ এবং ধান্ধাবাজ সুবিধাবাদীদের সংবিধান বিরোধী এবং নীতি ও নৈতিকতা বিবর্জিত এহেন বিরামহীন অপচেষ্টা এবং অপতৎপরতা বন্ধ করতে হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া অন্য কোন পথ কিংবা বিকল্প নেই।
(৮৮)শিক্ষিত এবং জ্ঞানবান ব্যক্তি মাত্রই জানেন যে, সংবিধান লঙ্ঘন এবং আদালত অবমাননা- আমাদের দেশে বিদ্যমান আইন অনুযায়ীই শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য। আর তা জানা থাকা সত্ত্বেও জ্ঞানপাপীগণ কর্তৃক অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এবং কুৎসিত মিথ্যাচারের মাধ্যমে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল স্বাধীনতা ও রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বিকৃতকারীদেরকে আইনের আওতায় না আনা গেলে, সময় ও সুযোগ বুঝে তারা আবারও অন্য কোন পন্থায় এবং অন্য কোন বিষয় নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেন। এছাড়া নতুন কোন ইস্যু নিয়ে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে নতুন খেলায় মেতে উঠতে পারেন। তাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, রক্তস্নাত সংবিধান এবং সুপ্রতিষ্ঠিত ইতিহাস বিকৃতির মতো অমার্জনীয় অপরাধ ক্ষমা করা কিংবা হালকা ভাবে নেয়া কোনভাবেই সমীচীন হবে না।
(৮৯)উপরোল্লিখিত সমুদয় ঘটনাবলীর আলোকে এবং সামগ্রিক বিবেচনার ধারাবাহিকতায় একথা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত হয় যে, জিয়াউর রহমান তাঁর জীবদ্দশায় তিনি নিজে কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কেউ কখনো তাঁকে (জিয়াকে) স্বাধীনতার ঘোষক বলে কোন দিন কোন দাবিই করেননি। তিনি কোন ঘোষকও নহেন। কিন্তু তাঁর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বাঙালির মহোত্তম অর্জন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করার অসৎ উদ্দেশ্যে সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী নিকৃষ্ট ষড়যন্ত্রকারীরা গোয়েবল্সীয় কায়দায় অবিরাম প্রচারণার মাধ্যমে জিয়াকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে চালিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই সমস্ত নরাধম জ্ঞানপাপীরা আদৌ স্বীকার কিংবা মানতেই চাননা যে, তাদের নেতা জিয়াউর রহমান নিজে স্বয়ং তাঁর স্বনামে পত্রিকায় আর্টিকেল লিখে নিজেকে নয় বরং অসংকোচে এবং অকপটে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতার ঘোষক এবং জাতির পিতা বলে স্বীকার করেছেন।
(৯০)এমতাবস্থায় উপরোল্লিখিত সমুদয় ঘটনাবলীর আলোকে একথা ঐতিহাসিকভাবে, দালিলিকভাবে এবং সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত ও প্রমাণিত যে, ১৯৭১ সনের ২৫শে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে মধ্য রাত শেষে অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব) নিজে স্বয়ং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছেন। এহেন ঘোষণার ব্যাপারে উপরোল্লিখিত বিভিন্ন ধরনের অকাট্য এবং অখণ্ডনীয় যুক্তিসমূহ সহ বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণাদির পাশাপাশি মহামান্য হাইকোর্ট কর্তৃক প্রদত্ত উপরোক্ত অত্যন্ত সুচিন্তিত, সুলিখিত ও তথ্যবহুল রায়; আমাদের সংবিধানের ১৫০ ও ১৫১ নং অনুচ্ছেদ এবং তৎসহ সংবিধানের চতুর্থ, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল সমূহে অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে বিবৃত এবং বিধৃত বক্তব্য সমূহের আলোকে তথা সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি অনুযায়ী মহাকালের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই বাঙালি জাতির জনক এবং আমাদের স্বাধীনতার মহান ঘোষক।
ড. মোঃ ফজলুর রহমান,সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ (অবঃ),লেখক ও কলামিস্ট
সহায়ক গ্রন্থাবলী
১। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান।
২। বাংলার কথা- বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, মুক্তধারা প্রকাশনী, ১৯৮৬।
৩। Witness to Surrender- Major Siddik Salik,
Oxford University Press, Karachi, 1977