বিশ্বে করোনার ভ্যাকসিন বন্টনে বৈষম্য- জাতিসংঘ মহাসচিব

বিশ্বের ১৩০টি দেশ এখনও করোনার এক ডোজ ভ্যাকসিনও পায়নি

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বর্তমানে বিশ্বে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের বন্টন প্রক্রিয়াকে এক চরম অসম ও অন্যায্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,বর্তমান বিশ্বে উৎপাদিত মোট ভ্যাকসিনের ৭৫ ভাগ মাত্র ১০টি দেশের দখলে রয়েছে। অপরদিকে বিশ্বের প্রায় ১৩০টি দেশ এক ডোজ ভ্যাকসিনও পায়নি। মহাসচিব জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।

গুতেরেস বলেন,‘বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন যেভাবে বিতরণ করা হচ্ছে তা চরম অসম ও অন্যায্য। বিশ্বের প্রায় ১৩০টির মত দেশ এখনও একটি ভ্যাকসিনও পায়নি অথচ মোট ভ্যাকসিনের শতকরা ৭৫ ভাগ মাত্র ১০টি দেশের দখলে। মহামরীর এই কঠিন মূহূর্তে ভ্যাকসিন সমতাই বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য সবচেয়ে বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব দেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন করা হচ্ছে সেসব দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের হার অনেক বেশী, অথচ দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো ভ্যাকসিন পেতে হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় সকল দেশে ভ্যাকসিনের ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিতের জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে একটি বৈশ্বিক ভ্যাকসিন প্রয়োগ পরিকল্পনার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

এতে বিজ্ঞানী, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থ প্রদানকারীরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। এরজন্য তিনি বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক শক্তিধর (G20) দেশগুলোর প্রতি একটি জরুরী টাস্ক ফোর্স গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। তাছাড়াও জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আশা প্রকাশ করে বলেন যে,বিশ্বের শীর্ষ ৭ অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশের জোট জি-৭ প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক যোগানের উৎসগুলোকে একত্রিত করাতে পারেন যাতে সারা বিশ্বে করোনার ভ্যাকসিনের সুষম সরবরাহ নিশ্চিত হয়।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ভ্যাকসিন কেনা ও সরবরাহের পরিকল্পনা ছিলো। তবে সংস্থাটি কোভ্যাক্স নামের এই উদ্যোগটি ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু করার লক্ষ্য অর্জনে ইতোমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে। কোভ্যাক্স (COVAX) পরিষেবা একটি আন্তর্জাতিক জোট যা,বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাভি এবং সিইপিআই সংস্থার সহযোগিতায় তৈরি করেছেন। বিশ্বের বেশ কিছু দেশ এবং সাফল্যের সর্বাধিক সম্ভাবনা রয়েছে এমন বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক ও নির্মাতাদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল।

এই  সংস্থাগুলির তৈরী ভ্যাক্সিন চুক্তিবদ্ধ দেশগুলিতে ন্যায্যভাবে সরবরাহ করবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু (WHO). মোট কতগুলি দেশ ইতিমধ্যেই এই পরিষেবার সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তা এখনও জানায়নি হু। তবে গত ১৫ জুলাই হু-এর ওয়েবসাইটে বলা হয়েছিল পঁচাত্তরটি দেশ ইতিমধ্যেই নব্বইটি গরীব দেশের সঙ্গে এই বিষয়ে অংশীদারি করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এই মোট ১৬৫টি দেশ মিলিয়ে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ হবে বলেও দাবি করা হয়েছে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য বিশ্ব অর্থনীতি যে মন্দার মুখে পড়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, দরিদ্র্য দেশগুলিরই ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ সবচেয়ে বেশি দরকার হলেও, ধনী দেশগুলিই তা দখল করবে। ফলে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলি কোভিড মহামারি প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্ত হতে পারলেও অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ভ্যাকসিনের অভাবে ভুগতে হবে। তাতে অর্থনৈতিক বিভাজন আরও বাড়ার সম্ভাবনা। বিগত কয়েক দশক আগে এইডস মহামারির সময় ঠিক এমনটাই ঘটেছিল বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম। জাতিসংঘের মহাসচিবের বর্তমান বক্তব্যে এখন আবারও সেই বৈশ্বিক বৈষম্যের ঈঙ্গিত ভেসে উঠছে।

আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১১ কোটি ১২ লক্ষ ৬৮ হাজার ২০ জন। আর এই মহামারীতে এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ২৪ লক্ষ ৬৩ হাজার ৯৩৮ জন।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »