ইউরোপ ডেস্কঃ জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পাহান আজ বুধবার বার্লিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ব্রিটেনে আবিষ্কৃত কোভিড -১৯ এর রূপান্তরিত ভাইরাস বা মিউটেশন ভাইরাসটি জার্মানিতে খূব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং বর্তমানে জার্মানির করোনায় আক্রান্তের শতকরা ২০% বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন,এই পরিসংখ্যান খুবই উদ্বেগজনক।
তিনি বলেন,বর্তমানে জার্মানির করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন এই মিউটেশন ভাইরাসে আক্রান্ত। জার্মানির পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান রবার্ট কোচ ইনস্টিটিউট (আরকেআই) থেকে প্রাপ্ত নতুন তথ্য অনুসারে,জার্মানিতে পরীক্ষা করা পজিটিভ পরীক্ষার নমুনায় ব্রিটিশ করোনভাইরাস মিউটেশনে (B.1.1.7) আক্রান্তের বিস্তার আনুপাতিকহারে গত দুই সপ্তাহে শতকরা ৬% থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ২২% পৌঁছিয়াছে। জার্মানির সরকার কোচ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে করোনার এই বৃটিশ মিউটেশন ভাইরাস কিভাবে ছড়াচ্ছে তা খুঁজে পাওয়ার জন্য সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতে ২৩,০০০ হাজারেরও বেশী পজিটিভ পিসিআর (PCR)পরীক্ষা বিশ্লেষণ করেছে এবং নমুনাগুলিকে সিকোয়েন্স করেছেন।
বার্লিনে আজ বুধবারের এই সাংবাদিক সম্মেলনের সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্পাহান সকলকে আবারও পূর্বের মত সতর্ক করে বলেন,বৃটেনের এই মিউটেশন B.1.1.7 ভাইরাস পূর্বের সাধারণ করোনা ভাইরাসের চেয়ে অনেক বেশী ও দ্রুত সংক্রামক। এই ভাইরাসটির অতি দ্রুত বিস্তার জার্মানির জন্য এক বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্পাহান আরও বলেন,বৃটেনের এই মিউটেশন ভাইরাসটি জার্মানির বর্তমান করোনা পরিস্থিতি জটিল থেকে আরও জটিলতর করে তুলছে। তিনি পরিসংখ্যানের উপর ভিত্তি করে বলেন,এই মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার প্রতি সপ্তাহে বৃদ্ধি পেয়ে দ্বিগুণ হারে বাড়ছে। তিনি আরও জানান, নতুন এই মিউটেশন ভাইরাসের বিস্তার রোধের চেষ্টায় জার্মানির সীমানা আংশিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া সত্ত্বেও এই মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঘটে।
ফ্রান্স ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতি অর্থাৎ ব্যবসা-বাণিজ্যের চলার ট্রানজিট পথ রবিবার থেকে অস্ট্রিয়ার Tirol অঞ্চল এবং চেক প্রজাতন্ত্রের সীমান্তে স্থবির হয়ে পড়েছে। এই ইউরো আন্তঃমহাদেশীয় ট্রানজিট রুট দিয়েই পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে সড়ক পথের ব্যবসা-বাণিজ্য চলে। মিউটেশন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের বিস্তারের ফলে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের পূর্বে লরি চালকদের ডাটা রেজিস্ট্রেশন ও করোনার নেগেটিভ সার্টিফিকেট প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার ফলে জার্মানি,ইতালি,চেক প্রজাতন্ত্র ও অস্ট্রিয়ায় হাজার হাজার লরি আটকা পড়ে রয়েছে। এই সমস্যার সমাধানে ইইউ নেতৃবৃন্দ সম্ভবত শীঘ্রই জরুরী বৈঠকে বসছে।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও জানান,জার্মানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মিউটেশন ভাইরাস B.1.351 এর উপস্থিতি শতকরা ১.৫% সনাক্ত হয়েছে। জেনস স্পাহান বলেন, জার্মানিতে মিউটেশন ভাইরাস ব্যাপক ছড়িয়ে যাওয়ার পরেও গড় আক্রান্তের সংখ্যা পরিসংখ্যান অনুযায়ী ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এটি প্রমাণ করে যে, কোভিড -১৯ এর বিধিনিষেধ কাজ করছে ।তিনি যোগ করে বলেন, বর্তমানে”আমরা জার্মানি সহ সমগ্র ইউরোপবাসী বর্তমানে এই মিউটেশন ভাইরাসের জন্য পুনরায় পূর্বের কঠিন পর্যায়ে রয়েছি।” বার্তা সংস্থা এএফপি আরও জানিয়েছেন,জার্মানিতে মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তার বৃদ্ধির ফলে ফ্রান্স জার্মানির সাথে সীমান্তে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করতে চাচ্ছে। এই ব্যাপারে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনা চলছে।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস
জার্মানির সরকার প্রধান চ্যান্সেলর আঞ্জেলা মের্কেল ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রনের সাথেও কথা বলেছেন। বর্তমানে ফ্রান্স সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক দল বার্লিনে আছেন।
বুধবার জার্মানিতে করোনায় নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩,৪৬৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ২২৫ জন। জার্মানিতে করোনায় এই পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩,৫৬,২৩৪ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন মোট ৬৬,৭৬১ জন। করোনার থেকে আরোগ্য লাভ করেছেন মোট ২১,৫৪,৬০০ জন। জার্মানিতে বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১,৩৪,৮৭৩ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থায় আইসিইউতে আছেন ৩,৩৫২ জন।