হবিগঞ্জ প্রতিনিধি: লেখাপড়া করে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটতে হবে বা চাকরিই করতে হবে এরকম কোন কথা নেই। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবে ও সফল হওয়া যায়৷ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ শায়েস্তাগঞ্জের সফল একজন উদোক্তা মো. সোহাগ মিয়া।
সোহাগ মিয়া হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার নিশাপট গ্রামের মোঃ শাহ আলমের পুত্র। তিনি হবিগঞ্জের বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে একাউন্টিংয়ে এমবিএ শেষ করেছেন,বর্তমানে তার বয়স প্রায় ২৯। তিনি লেখাপড়া শেষ করে প্রায় চার বছর চাকুরির জন্য ঘোরাফেরা করেছেন । অবশেষে চাকুরী না পেয়ে নিজের প্রচেষ্টাকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন একজন সফল চাষী।
ইউরো বাংলা টাইমস সরজমিনে গিয়ে জানতে পারেন,২০১৮ সাল থেকে তিনি কৃষি কাজে সময় দিচ্ছেন। নিজের জমিতেই গড়ে তুলেছেন বিভিন্নরকম শাকসবজির বাগান। তার বাগানে উল্লেখযোগ্যভাবে রয়েছে করলা, টমেটো ও সীম। সোহাগ মিয়া এ বছর ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছেন সীম। এবার তার জমিতে সীমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে এবার সীম বিক্রিকরে আসতে পারে দুই লক্ষ টাকা। তার সীম ফলাতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মত।
প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পুর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি চাষ করেছেন সীম। তার জমিতে কোনরকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি, ফলে একদম দেশীয় স্বাদে ক্রেতারা সীম কিনে খেতে পারবেন। সোহাগ মিয়ার জমিতে ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তার কৃষি কাজে তাকে সহায়তা করে আসছেন তার মা ও বোন। সোহাগের কৃষি ফার্মে কর্মরত শ্রমিক আনজব আলী বলেন দৈনিক ৪শ টাকা মজুরিতে কাজ করেন এখানে। এই টাকা দিয়েই সংসার চালান তিনি।
সৌদিআরব ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন একই গ্রামের ফরিদ মিয়া। দেশে এসে কি করবেন বুজে উঠতে পারছিলেন না। মোরগের ফার্ম দিয়ে লোকসান হয়েছে অনেক টাকা। সোহাগের বিভিন্ন সবজির চাষ দেখে উৎসাহ পেলেন তিনিও । নিজেও করলেন বিভিন্ন রকম সবজির চাষ। এতে করে এখন ফরিদ মিয়া ও ভালো টাকা আয় করছেন।
সোহাগের মা রেজিয়া খাতুন বলেন উচ্চ শিক্ষিত ছেলে যখন চাকরি পাচ্ছিল না তখন খুবই দুষচিন্তায় পড়েছিলাম। এরপর ছেলে যখন কৃষি কাজে মনোনিবেশ করলো তখন তিনিও সহযোগীতা করতে লাগলেন। এখন আর কোন চিন্তা নাই তার। ছেলে এখন সফল কৃষক। ছেলের চাষ করা নানা রকমের সবজির বিক্রি করে অনেক টাকা আয় হয় তাদের। এ বিষয়ে সোহাগ মিয়া বলেন একাউন্টিং এ এমবিএ শেষ করে চার বছর চাকরির পিছনে ছুটেছি কিন্তু চাকরি জোটলনা ভাগ্যে। পরে পারিবারিক জমিতে টমেটো, করলা ও সীমের চাষ শুরু করি। সম্পুর্ন অর্গানিক প্রদ্ধিতে সবজির চাষ করি। যে কারনে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। আর বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারি। টমেটো আর করলা চাষ করার পরে এবার সীমের চাষ করেছি। সীম চাষে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো। আল্লাহ রহমতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ২ লাখ টাকার সীমের বিচি বিক্রি করতে পারবো। ৪ বছর চাকরির পিছনে না ঘুরে কৃষি কাজ করলে এতো দিনে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম। আমাকে দেখে গ্রামে অনেকেই এখন বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ শুরু করেছেন। একই সাথে আমার ফার্মে কাজ করে ৪/৫ টি পরিবারের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি সহযোগীতা পেলে তিনি আরও জমিতে নানান ধরনের সবজি চাষের উদ্যোগ নিবেন।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুকান্ত ধর বলেন,উচ্চ শিক্ষিত সোহাগ এখন অনেকেরই অনুপ্রেরনা। চাকরি পেতে ব্যর্থ হলেও তিনি কৃষিতে সফল। ওনারমতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কৃষি কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে দেশে কৃষিতে বিপ্লব হবে। আমি অনেকেই উৎসাহ দেই কৃষি কাজ করার জন্য। সাথে সব ধরনের সহযোগীতা। যে কেউ পরার্মশ চাইলে আমি সহযোগীতা করি। সোহাগের সরকারি সহয়তার বিষয়ে তিনি বলেন উনি চাইলে আমি অব্যশই সহযোগীতা করবো।
মোতাব্বির হোসেন কাজল /কাজল ইবি টাইমস