হবিগঞ্জ : সৌদি আরবের মরুভূমির ফসল কোচা ও স্কোয়াশ বাংলাদেশের মাটিতে চাষ করে ব্যাপক সফল হয়েছেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার কৃষক সানু মিয়া। শীতকালীন এই সবজি আবাদ করে মাত্র দুই মাসেই লাখপতি হয়ে নতুন ফসল চাষাবাদে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি।
২০ শতক জমিতে স্কোয়াশ চাষ করে সময়মত সেচ প্রদান, ফ্রুট ফ্লাই এর জন্য ফাঁদ ব্যবহার ও মোজাইক ভাইরাসের জন্য ছত্রাকনাশক স্প্রে ব্যবহার করায় জমিতে কোন ধরনের রোগ বালাইয়ের আক্রমণ করতে পারেনি। বর্তমানে তার ক্ষেতের স্কোয়াশ স্থানীয় ভাবে বাজারজাত শুরু হয়েছে। স্কোয়াশ একটি বিদেশী সবজি। ইউরোপে ‘জুকিনী’ ও সৌদি আরবে ‘কোচা’ নামে পরিচিত। বিশ্বের অনেক দেশে এটি খুব জনপ্রিয় একটি সবজি।
কুমড়া গোত্রের এই সবজিটি স্বল্প জীবনকালিন, সুস্বাদু ও উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় বাংলাদেশের কৃষকদের কাছে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দুই রঙের স্কোয়াশ বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায় সবুজ এবং হলুদ। তার মধ্যে সবুজ স্কোয়াশ বেশ জনপ্রিয়। ইউরোপে এই সবজি টি খুবই জনপ্রিয় এবং সাড়া বছরই এটি পাওয়া যায় ।
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রামের সানু মিয়া। মাত্র ২০ শতক জমিতে প্রথমবার স্কোয়াশ চাষ করেছেন। তবে তার খেত অন্যদের চেয়ে আলাদা। একবার তাকালেই নজর আটকে যায়। প্রথমবার স্কোয়াশ চাষ করেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। স্থানীয় কৃষিভাগের পরামর্শ গ্রহণ করে শীতকালে এ সবজি চাষ করেন। এতে তার ব্যায় হয়েছে মাত্র আট হাজার টাকা। বিক্রি হবে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায়। বীজ বপন করার ৩০ দিনের মধ্যে ফুল আসতে শুরু করে এবং ৪৫ দিন থেকে ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। প্রায় ৮০দিন পর্যন্ত ফসল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি গাছেই ১০ থেকে ১৫টি পর্যন্ত ফল আসতে দেখা দেখা যায়। জাতভেদে প্রতিটি সবজি ১ থেকে ৩ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। যার খুচরা বাজার মুল্য প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও পাইকারি ৩০-৩৫ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়।
রোগবালাইয়ের মধ্যে মোজাইক ভাইরাস ও ফ্রুট ফ্লাই আক্রমন লক্ষ্য করা যায়। সময়মত দমন ব্যবস্থা নিলে সহজেই ফসল ঘরে তোলা যায়। মাত্র দুই মাস বয়সেই স্কোয়াশ গাছে সবজি দেখে অন্যান্য কৃষকদের মাঝেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। আগে বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে লাভবান না হলেও স্বল্প সময় ও স্বল্প খরচে স্কোয়াশ চাষ করে লাভমানের কথা জানালেন কৃষক সানু মিয়া,স্কোয়াশ স্বাচ্ছন্দে কাজ করে নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিচ্ছেন ।
স্কোয়াশ চাষে কৃষকদের উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে। এ সবজি চাষে প্রচুর লাভবান হওয়া সম্ভব। ভুলকোট গ্রামে প্রথমবারেই স্কোয়াশ চাষে কৃষক সানু মিয়ার সাফল্য এসেছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা। কম সময়ে বেশী ফলন পাওয়ায় অনেক কৃষক স্কোয়াশ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। অন্যান্য সবজির সাথে ফসল হিসাবে স্কোয়াশ চাষ করে কৃষকদের অতিরিক্ত মুনাফা হচ্ছে। ধীরে ধীরে বাহুবল উপজেলায় স্কোয়াশ সবজির চাষ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে এই কর্মকর্তা জানান। স্কোয়াশের বীজ এখনও সরকার কিংবা দেশের কোনও কোম্পানি আমদানি কিংবা তৈরি করছে না। সৌদি আরব কিংবা দেশের মাটিতে যদি এর বীজ তৈরি করা যায় তাহলে চাষীরা কাঙ্খিত সফলতার মুখ দেখতে পারবেন। বিষমুক্ত সবজি হিসেবে দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বিদেশি এই ফসলটি।
মোতাব্বির হোসেন কাজল /ইবি টাইমস