বায়োটেক সংস্থা নোভাভ্যাক্স এর নতুন করোনার ভ্যাকসিন ৮৯% কার্যকর বলে ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ বৃটিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক কোম্পানি নোভাভ্যাক্সের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে (বৃটেন) তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর দেখা গেছে তাদের করোনার টিকা বা ভ্যাকসিন ৮৯ দশমিক ৩ শতাংশ কার্যকর। তাদের এই ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ১৮ থেকে ৮৪ বছর বয়সী ১৫ হাজার মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এবং যাদের ২৭ শতাংশ মানুষের বয়স ছিল ৬৫ বছরের বেশী।

নোভাভ্যাক্স-এর প্রধান নির্বাহী স্ট্যান অ্যার্ক বলেছেন যে, যুক্তরাজ্যে ট্রায়ালের ফলাফল “চমৎকার” এবং “ততটাই ভালো যতটা আমরা আশা করেছিলাম”। তিনি আরও জানান, তাদের এই নতুন Novavax ভ্যাকসিন নতুন মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতেও সক্ষম। নোভাভ্যাক্স এর সিইও স্ট্যান অ্যার্ক বলেন,দক্ষিণ আফ্রিকাতে বেশীরভাগ মানুষ করোনাভাইরাসের মিউটেশন বা পরিবর্তিত ভাইরাস B.1.351 দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের এই ভ্যাকসিনটির ট্রায়ালে দেখা গেছে যে,যাদের এইচআইভি (HIV) নেই তাদের ক্ষেত্রে এটি ৬০ শতাংশ কার্যকর হয়েছে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাপারে তিনি বলেছেন যে, সেখানকার ফলাফল আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে বেশী সফলতা হয়েছে।

যুক্তরাজ্য (ইউকে) বর্তমানে করোনাভাইরাসের তিনটি টিকা বা ভ্যাকসিন জরুরী ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন পেয়েছে। এর মধ্যে একটি অক্সফোর্ড -আস্ট্রাজেনেকা, অপরটি ফাইজার-বায়োএনটেক এবং তৃতীয়টি ঔষধ কোম্পানি মর্ডানার ভ্যাকসিন। বিবিসি জানিয়েছেন,এই ভ্যাকসিনের সফল ট্রায়ালের ঘোষণার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এই ‘সুখবর’কে স্বাগত জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে যুক্তরাজ্যের ঔষধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ এখন এই ভ্যাকসিন পরীক্ষা করে দেখবে।

যুক্তরাজ্য এরই মধ্যে এই ভ্যাকসিনের ৬ কোটি ডোজ কেনার জন্য আদেশ দিয়েছেন। আর এই ভ্যাকসিনটি তৈরী হবে ইংল্যান্ডের Stockton-on-Tees শহরে। বৃটিশ সরকারের এক সূত্র বলেছে, যুক্তরাজ্যের মেডিসিন অ্যান্ড হেলথ কেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সির অনুমোদন পেলে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই ভ্যাকসিনের প্রয়োগ শুরু করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, যদি নতুন এই ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়ে যায়, তাহলে এনএইচএস (National Health Service) প্রয়োগ শুরু করতে প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, “এটি একটি ইতিবাচক খবর। যদি মেডিসিন নিয়ন্ত্রকরা এটির অনুমোদন দেয়, তাহলে নোভাভ্যক্স ভ্যাকসিন আমাদের টিকাদান কর্মসূচীকে জোরদার করবে এবং এই ভয়াবহ বৈশ্বিক ভাইরাসের মোকাবেলায় এটি হবে আমাদের আরেকটি অস্ত্র”।

তিনি আরও বলেন যে,”আমি গর্বিত যে যুক্তরাজ্য আরেকটি উদ্ভাবনে সামনের সারিতে রয়েছে। আমি আমাদের দেশের মেধাবী বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং একই সাথে যে হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবী ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন, তাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই”। যুক্তরাজ্যের নোভাভ্যাক্স ট্রায়ালের প্রধান ইনভেস্টিগেটর অধ্যাপক পল হিথ বলেন, “এই ভ্যাকসিনের ফলাফল খুবই রোমাঞ্চকর, যা দেখাচ্ছে যে,ভ্যাকসিন বেশ কার্যকর এবং নিরাপদ। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের যে নতুন মিউটেশন ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে, তার বিরুদ্ধেও এটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।” তবে ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক্সপেরিমেন্টাল মেডিসিনের অধ্যাপক পিটার ওপেনশ বলেন, যুক্তরাজ্যে ট্রায়ালে এই ভ্যাকসিনের যে ফলাফল দেখা গেছে তা ‘চমৎকার’, কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পরীক্ষায়,এটি কিছুটা কম কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেটা ‘উদ্বেগের’।

নোভাভ্যাক্সের সিইও স্ট্যানলি আরও জানান,আমি আশা করছি আমাদের এই ভ্যাকসিন বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা ভ্যাকসিনটি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিশ্বব্যাপী বাজারজাত করার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।

কবির আহমেদ /ইবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »