ভোলা: আবহমান গ্রাম-বাংলার চিরন্তন ঐতিহ্যসমূহের মধ্যে পৌষপার্বণে বাহারী পীঠাপুলি আর নবান্নের উৎসবে এখন আর আগের আমেজ নেই। ‘ভাঁপা পীঠা তোরে খাইতে গিয়া আমার মুখটা পুইরা গেছেরে’ জনপ্রিয় এই গানের রেশ ধরে আমাদের মনের গহীন কোনে ভেসে ওঠে বাঙ্গালীর শীত কালীন নবান্নের পীঠা উৎসবের কথা। গ্রামবাংলার সংস্কৃতি থেকে আস্তে আস্তে যেনো হারিয়ে যাচ্ছে এই আনন্দ-উৎসব।
এক সময়ে ভাওইয়া-ভাটিয়ালী-মুর্শীদি গান গুন গুন করে গাইতে গাইতে অগ্রহায়ন মাসে মাঠ ভর্তি সোনালী রংয়ের পাকা ধান কাটায় ব্যস্ত থাকতো কৃষক। মাথায় করে ধানের আঁটি বয়ে এনে বাড়ীর আঙ্গিনায় জড়ো করে পরে গরু দিয়ে তা মাড়াই করে ধান ও খড়-কুটা আলাদা করতো। সেই খড়-কুটা দিয়ে কেউ ঘরের ছাউনী দিত আবার কেউ গরুর খাবার হিসেবে সংরক্ষন করতো। এরপরই কৃষানীদের কাজ শুরু হয়ে যেত, যেন সাজ সাজ রব পড়েছে, তারা সংসারের দ্বায়িত্ব সামলে কিছু ধান বিক্রি বা সংসারের চাল-ভাতের জন্য গরম পানিতে সিদ্ধ করতো আবার কিছু ধান পীঠা তৈরীর জন্য সিদ্ধ ছাড়া রেখে দিতো যাকে স্থানীয় ভাষায় (আলবা) ধান বলা হয়। কিছু ধান আবার জমিতে পরবর্তী ধানের চারা রোপনের জন্য বীজতলা হিসাবে সংরক্ষন করতো।
এসকল কর্মকান্ডের সঙ্গে গ্রামের কৃষানীরা আলবা ধানকে ঢেঁকিতে ছেঁটে ঘরে-ঘরে, বাড়ীতে-বাড়ীতে নব অন্নের বাহারী নকশার পুস্টিমান সম্পন্ন পীঠা তৈরী করা বা নবান্নের উৎসব চলতো। বিকাল থেকে রাত ব্যাপী নাচ-গানের পাশাপাশি একজন আরেক জনের ঘরে বা বাড়ীতে বেড়াতে যেত অথবা পীঠা পাঠাতো। এতে নিজেদের মাঝে আন্তরিকতা-হৃদ্যতা প্রকাশ পেতো।
কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার যাতাকলে বাংলার বহুদিনের ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। কৃষক কাদের বলেন, ‘এখন কৃষকেরা অল্প পরিশ্রমে , অল্প জায়গায়, স্বল্প সময়ে বেশী ফসল ও মুনাফা চায়। তাই আগের সেই পুরনো জাতের ধানের চাষ করতে চায় না।’ ইরি-বোরো ধান, সার-কীট নাশকের আগ্রাসনে মুনাফা লোভী কৃষকের কারনে আউস, আমন, গীয়স, কালিজিরা সহ বিভিন্ন জাতের পুস্টিমান সমৃদ্ধ ধান কম মুনাফা বিধায় এগুলো চাষে অনাগ্রহী। উপরোন্তু প্রযুক্তির উৎকর্ষকায় উরকা, ট্রাকটর সহ নানা মেশিনের সাহায্যে কম খরচে, স্বল্প সময়ে ক্ষেত হতে ধান কাটা থেকে শুরু করে বাড়ীতে চাল হয়ে পৌছানো পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়াই মেশিনে হয় এমন কি পীঠা তেরীর চালের গুড়াও মেশিনে হয়। তাই সেই নবান্নের আমেজ এখন আর পাওয়া যায় না।
এছাড়া এখন শহরের পাশাপাশি গ্রামগুলোতেও গড়ে উঠেতে পীঠার দোকান। ফলে কর্মব্যস্ত বেশিরভাগ মানুষ কিনেই পীঠা খেয়ে থাকেন।
সাব্বির বাবু/ইউবি টাইমস