সাব্বির আলম বাবু, ভোলা: ভোলা জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে সবজি চাষে কৃষকেরা সাফল্য পাচ্ছেন। চরের উর্বর জমিতে বটবটি, চিচিঙ্গা, লাউ, টমোটো, মিষ্টি কুমড়া, শিমসহ বিভিন্ন মওসুমি সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। কেউ কেউ ক্যাপসিকাম, শসা ও বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষও করছেন।
উপকূলীয় জেলা ভোলার মাঝের চর, রামদাসপুর চর, চর চটকিমারা, চর হোসেন, মনপুরাসহ বিভিন্ন চরে শুধু সবুজের সমারহ। মাইলের পর মাইল ক্ষেতজুড়ে শোভা পাচ্ছে শসা, ক্যাপসিক্যাম, বটবটি, চিচিঙ্গা, করল্লা, লাউ, তরমুজ, টমোটো, মিষ্টি কুমড়া, শিম। ধানের পাশাপাশি গত কয়েক বছর ধরে চলছে সবজি চাষ।
এবছর প্রায় ৯’শ হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়েছে। এখানকার সবজি স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে নৌ-পথে চলে যায় ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এছাড়া মাঝের চরের উৎপাদিত সবজি যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও ইতালীসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানীর প্রক্রিয়া চলছে। যা চরাঞ্চলের কৃষি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বছরের অন্য সময়টাতে এ চরে ধান চাষ করা হলেও এ মৌসুমে ব্যাপক সবজির চাষ হয়। জোয়ারে মাটিতে প্রচুর পলি জমার ফলে উর্বর শক্তি অনেক বেড়ে যায়। ফলে মৌসুমের ৪ থেকে ৫ মাস সবজির চাষ হয় পুরো চরে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে এসব চরে বাণিজ্যিকভাবে ক্যাপসিক্যাম চাষ স্থানীয় অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে।
ভোলা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো:রিয়াজ উদ্দিন বলেন, চরের জমি বেলে ও দোঁয়াশ মাটি যুক্ত হওয়ায় সবজি চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া এখানকার সবজির গুণগত মানও অনেক ভালো।
কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে সদর ও দৌলতখান উপজেলার মধ্যে থাকা মাঝের চর থেকে চিচিঙ্গা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
তারা বলেন, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে এসব চরাঞ্চলকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মো: হুমায়ুন কবির জানান, এসব চরে গত বছর ১৫ হাজার ১৫০ মে:টন সবজি উৎপাদন হয়েছিল। যার বাজার মূল্য ৩০ কোটি টাকারও বেশি। এছাড়া জেলায় এবছর মোট প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। চরাঞ্চলের কৃষকদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সুষম মাত্রায় সার প্রয়োগ, সারিবদ্ধ বীজ ও চারা রোপণসহ সব ধরনের পরামর্শ সেবা অব্যাহত রয়েছে।
সবজি চাষী মো: ফিরোজ এ বছর এক একর জমিতে চিচিঙ্গার চাষ করেছেন। এ পর্যন্ত ৩ বার সবজি বিক্রি করেছেন দেড় লাখ টাকার। তার খরচ হয়েছে প্রায় ৪ লাখ টাকা। সামনের দিকে আরো ৫ লাখ টাকার বিক্রি হবে এমন আশা তার। তিনি মূলত ঢাকার কাওরান বাজার ও যাত্রাবাড়ীতে সবজি বিক্রি করে থাকেন।
মাঝের চরের ক্যাপসিক্যাম চাষী মো: হান্নান বলেন, এ বছর ৩ লাখ টাকা খরচ করে প্রায় ২ একর জমিতে ক্যাপসিক্যাম চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত ৩ লাখ টাকার সবজি বিক্রি হয়েছে। মাঠে আরো ৫ লাখ টাকা মূল্যের ক্যাপসিক্যাম রয়েছে বলে জানান তিনি। একই এলাকার আরেক চাষী মো: হাসেম আলী জানান, মূলধন বেশি থাকলে ক্যাপসিক্যাম চাষে লাভ বেশি হয়। অনেকেই ক্যাপসিক্যাম আবাদ করে লাভের মুখ দেখছেন। তিনি ৩ একর জমিতে চাষ করেছেন। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে তিনি লাভবান হবেন বলে জানান।
চর মদনপুরের কৃষক রহমত মিয়া ও আজগর বলেন, তারা মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ করছেন। ফলন এসেছে ভালো। লাউ সহ এর পাতা ও ডগা বিক্রি করে তারা মূলধনসহ লাভের আশা করছেন।
ভোলা/ইউবি টাইমস