সমগ্র অস্ট্রিয়া অব্যাহত করোনার লাল জোনে !
আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ আজ অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন, অস্ট্রিয়ার করোনা কমিশন তাদের সাপ্তাহিক বৈঠকে অস্ট্রিয়াকে করোনার লাইট সিস্টেমে অব্যাহত ঝুঁকিপূর্ণ গাঢ় লাল বর্ণেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কমিশন জানান,সমগ্র অস্ট্রিয়া এখনও করোনা ভাইরাসের অতি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যেই রয়েছে। কমিশন মনে করছেন যেহেতু বৃটেনের পরিবর্তিত মিউটেশন ভাইরাস অস্ট্রিয়ায় সক্রিয়,তাই যে কোন সময়ে সংক্রমণের বিস্তারের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী Salzburg ও Tirol রাজ্যে এই মিউটেশন ভাইরাস B.1.1.7 এর ব্যাপক উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত কয়েক শতাধিক মানুষ এই মিউটেশন ভাইরাসে সনাক্ত হয়েছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ২১ জানুয়ারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের সরকার প্রধানগণ এক ভিডিও কনফারেন্স বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ গাঢ় লাল জোনে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার ব্যাপারে এক ঐক্যমতে পৌঁছিয়াছেন। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ করোনার সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে “গাঢ় লাল বর্ণে” চিহ্নিত করে সেখানে ভ্রমণে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাপারে একমত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার ইইউ কাউন্সিলের ভিডিও কনফারেন্স শেষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কমিশনের প্রধান উরসুলা ভন ডের লেইন জোর দিয়েছিলেন যে একক বাজারের জন্য অভ্যন্তরীণ সীমানাগুলি অবশ্যই উন্মুক্ত থাকতে হবে তবে সদস্যদের ভ্রমণ এড়ানো উচিত। তিনি আরও বলেন,”অত্যন্ত গুরুতর স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি বিবেচনায় বর্তমানে ইইউর প্রতিটি দেশ অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত বা নিষিদ্ধ করা উচিত”। তবে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য আমাদের আভ্যন্তরীণ পারস্পরিক সীমান্ত উন্মুক্ত থাকবে। আরও সংক্রামক কোভিড -১৯ বৈকল্পিকের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য অভ্যন্তরীণ সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপের প্রশ্ন সাম্প্রতিক সময়ে আলোচনায় উঠে এসেছে, মূলত জার্মানি ও ফ্রান্স উত্থাপিত উদ্বেগের কারণে।
জার্মানি প্রয়োজনে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলির সমস্ত যাত্রী ট্র্যাফিকের উপর অস্থায়ী এবং সীমিত নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব করেছিল,যদিও ফ্রান্স বৃহস্পতিবার রাতে ঘোষণা করেছিল যে ইইউর অভ্যন্তর থেকে ফ্রান্সে যে কাউকে প্রবেশ করতে হলে তাকে অবশ্যই নেগেটিভ টেস্ট হবে। সীমান্ত বিধিনিষেধগুলি ইইউর প্রতিবেশী দেশগুলির জন্য একেক জায়গায় একেক রকমের। তাই ফ্রান্স,জার্মানি এবং ব্রাসেলসের ইইউ কর্মকর্তারা ২০২০ সালের বসন্তে মহামারীটির প্রথম তরঙ্গ চলাকালীন ভ্রমণ অরাজকতার পরে একটি সমন্বিত প্রতিক্রিয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
গত মার্চ মাসে সংক্রমণ ইউরোপের চারপাশে বেড়ে যাওয়ার সাথে সাথে বেশ কয়েকটি সদস্য রাষ্ট্র একতরফাভাবে জাতীয় সীমান্তকে আতঙ্কিত ও বন্ধ করে দিয়েছিল, যাতায়াত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল। এই সিদ্ধান্তটিকে বিপর্যয়কর হিসাবে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে হোঁচট খাচ্ছে ইউরোপীয় অর্থনীতিকে বিঘ্নিত করা, এবং নেতারা বলছেন যে তারা কারখানা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে গিয়ে ভাইরাসের নতুন রূপকে ব্যর্থ করার উপায় খুঁজে পেতে কঠোর পরিশ্রম করবেন।
প্রেসিডেন্ট ডের লেইন ইইউর সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাকে “গাঢ় লাল বর্ণে” চিহ্নিত করার প্রস্তাব করেন। এই গাঢ় লাল অঞ্চল থেকে কেহ বের হলে তাকে অবশ্যই করোনার নেগেটিভ সনদ নিয়ে বের হতে হবে। আর কেহ বাহির থেকে এই গাঢ় লাল অঞ্চলে প্রবেশ করলে অবশ্যই ২ সপ্তাহের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। তিনি ইইউর বাহিরের সীমান্তগুলির জন্য অতিরিক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন। ইইউতে ভ্রমণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করারও প্রস্তাব করেছেন তবে জরুরী নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ভ্রমণগুলির জন্য অনুমোদিত থাকবে।
ইইউ কমিশন প্রস্তাব করেছেন, এখন থেকে প্রতিটি সদস্যদেশ থেকে বের হলেই করোনা মুক্ত সার্টিফিকেট নিয়ে বের হতে হবে। বাস্তবে অনেক ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশেই ইতোমধ্যে এই বিধিনিষেধের বেশ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। ইইউ কমিশন কেবল সুপারিশ করতে পারে এবং সেগুলি অনুমোদন করবে কিনা তা ইইউ কাউন্সিলের উপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রদত্ত সীমানা জাতীয় পর্যায়ে পরিচালিত হয় ইইউ এবং শেঞ্জেন অঞ্চলের অনেক দেশ ইতোমধ্যে এই জাতীয় পদক্ষেপ আরোপের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে।
অস্ট্রিয়ার সরকার প্রধান চ্যান্সেলর সেবাস্তিয়ান কুর্জ বৈঠকের পর এপিএ কে জানান,বৈঠকে বর্তমানে করোনার মিউটেশন ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারের রোধে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। তবে তিনি বলেন, ব্যবসা- বাণিজ্যের জন্য ভ্রমণ ও সীমান্ত উন্মুক্ত থাকার পক্ষেও সকলে একমত পোষণ করেছেন। তিনি আরও বলেন, খুব শীঘ্রই এই ব্যাপারে একটি দিক-নির্দেশনা আসবে।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,০৮৮ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩২০ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে Salzburg রাজ্যে ৬৯৬ জন,OÖ রাজ্যে ২৪৯ জন, NÖ রাজ্যে ২২৮,Steiermark রাজ্যে ২১৮ জন,Tirol রাজ্যে ১৪২ জন,Kärnten রাজ্যে ১৩১ জন, Vorarlberg রাজ্যে ৭১ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৩৩ জন নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লক্ষ ১ হাজার ৮৮৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৭,৩৩০ জন। করোনা থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৩,৭৮,৪০৮ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৬,১৪৮ জন। এর মধ্যে ক্রিটিক্যাল অবস্থার মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩৩১ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ১,৯১৭ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।
কবির আহমেদ /ইবি টাইমস