ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা আমাদের ভাষা ও স্বাধীনতাসহ সমস্ত সংগ্রামের সূতিকাগার। বর্তমান অগ্রযাত্রায় এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জ্ঞান- বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে যেতে হবে। এটা একটা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি সেই প্রতিষ্ঠান যা আমাদের সমস্ত অর্জনে পথ দেখিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সবসময় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছে। ৭৫ এর পর মিলিটারী ডিক্টেটররা ছাত্রদের হাতে অস্ত্র- অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ-সুনাম নষ্ট করেছে। আবার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংসের বিরুদ্ধে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র- শিক্ষকরাই রুখে দাঁড়িয়েছে।’
জ্ঞান- বিজ্ঞানের সমস্ত ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে গবেষণায় গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার যে মানব সম্পদ গড়ে তোলা তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাঙালি হিসেবে আমাদের রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক অধিকার, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এবং আমাদের স্বাধীনতা অর্জন—প্রতিটি সংগ্রামের সূতিকাগার হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগ্রাম করেছে—প্রতিটি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, অর্থাৎ পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যে সামরিক শাসকরা একের পর ক্ষমতা দখল করতে শুরু করে। পঁচাত্তরের পর দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শুধু অস্ত্রের ঝনঝনানি। সেখানে অস্ত্র, বোমাবাজি, মেধাবী ছাত্রদের বিপথে নিয়ে যাওয়া, শিক্ষার মান নষ্ট করে দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেটা ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই পরিবেশ নষ্ট হয়। সেটাই আমরা হতে দেখেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় আসার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, দ্বিতীয় হচ্ছে শিক্ষার মান উন্নত করা এবং শিক্ষার পরিবেশ ঠিক করার ওপর গুরুত্ব দেই। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল—বাংলাদেশের মানুষ একটি সুন্দর জীবন পাবে, উন্নত ভবিষ্যৎ পাবে, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত একটি বাংলাদেশ পাবে। কিন্তু একটি শিক্ষিত জাতি ছাড়া এটি কখনোই সম্ভব নয়। তাই শিক্ষাকে আমরা সবসময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এটা একান্তভাবে অপরিহার্য। কারণ, বিশ্বের সঙ্গে আমাদের তাল মিলিয়ে চলতে হবে। তাই বিজ্ঞান-প্রযুক্তি শিক্ষাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ছেলেদের প্রথম দুটো কম্পিউটার কিনে দিয়ে বলেছিলাম, তোমরা দ্রুত শুরু করো। এখন শুনলে অবাক লাগবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হতে পেরে তিনি নিজে সত্যিই গর্বিত বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘শুধু আমি নই, আমার পরিবারের সকলেই, আমার ছোট ভাই শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল। আমার ছোট্ট ভাইটি শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি স্কুলের ছাত্র ছিল। আমার স্বামীও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন এবং একটি হলের ভিপিও ছিলেন। এছাড়া আমাদের পরিবারের অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে করোনাভাইরাসে সারা বিশ্ব স্থবির। আমিও ঘরে অনেকটা বন্দি। মাঝে মাঝে মনে হয়, ২০০৭ সালে যখন গ্রেফতার হয়েছিলাম, তখন একটা ছোট কারাগারে ছিলাম—এখন মনে হয় বড় কারাগারে আছি। যার কারণে আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হতে না পারাটা সত্যিই আমার জন্য অনেক কষ্টের, খুব দুঃখের। মনটা পড়ে আছে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে।’
ঢাকা প্রতিনিধি/ইউবি টাইমস