চরফ্যাসন(ভোলা) : সরকারী সাহায্য সহযোগীতা পেলে পেয়াজ উৎপাদ বৃদ্ধি করতে ও সফল ভাবে চাষে আগ্রহী হবেন বলে কয়েক জন পেয়াজ চাষী এমন কথা ই জানালেন ওসমানগঞ্জ এর কয়েকজন পেয়াজ চাষী।পেঁয়াজ উৎপাদনে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে চরফ্যাসন উপজেলার অনাবাদি জমিসহ বিচ্ছিন্ন চর-চরাঞ্চলগুলোয়। উপযোগী জমিতে যথাসময়ে পেঁয়াজের চাষ করলে বাম্পার ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন এ অঞ্চলের চাষীরা। আগ্রহী চাষীদেরকে উন্নত মানের পেঁয়াজের বীজ,সার,সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ ও ফলন উৎপাদন পরবর্তী সংরক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দেয়া হয় তাহলে পেঁয়াজ চাষে এগিয়ে আসবেন বলে জানান চরাঞ্চলের কৃষকরা।
কৃষি বিশ্লেষকরা বলছেন চরফ্যাসনে পেঁয়াজ আবাদ করার মতো হাজার,হাজার হেক্টর জমি রয়েছে। সরকার যদি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে পেঁয়াজ চাষের অনুকূলীয় জমিগুলো নির্বাচন করে চাষীদের সুযোগ সুবিধাসহ প্রণোদনা দেয় তাহলেই চরাঞ্চলগুলো হয়ে উঠবে পেঁয়াজের ভান্ডার। কৃষি বিশ্লেষকগণ আরও বলেন, নিজ দেশেই যদি পেঁয়াজ উৎপাদন ও সংরক্ষণ করা যায় তাহলে আমদানি কেন রপ্তানী করেও জাতীয় উন্নয়নে চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী অধিক ভূমিকা রাখতে পাড়বে।
চরফ্যাসন উপজেলার নজরুল নগর,চর-কলমী,চর মালা,চর শাহজালাল,চর পাতিলা,চর কুকরি-মুকরি,ঢাল চর,তারুয়াসহ আরও একাধীক চরাঞ্চলে রয়েছে হাজার,হাজার হেক্টর জমি। এসব চরের অধিকাংশ জনগোষ্ঠী মৎস্য শিকার, গরু,মহিশ পালন ধান চাষ এবং মৌসুমী চাষাবাদসহ বাঙ্গি ও তরমুজ আবাদ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এ চরগুলো নদী সংলগ্ন হওয়ায় বেশিরভাগ চাষীরা সারাবছর ধান চাষ করে। অল্পসংখ্যক চাষীই মরিচসহ আলু,টমেটো,লাউ,কুমর এবং শশা খিরাসহ তরমুজ বাঙ্গিও চাষ করে। উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ইউনিয়ন মুজিব নগর ইউনিয়নের তরমুজও পেয়াজ চাষী আহলাদ হোসেন মাতাব্বর, আমিনাবাদ ইউনিয়নের ধান চাষী কামাল উদ্দিন,এবং নীলকমল ইউনিয়নের তরমুজ চাষী খলিল মিয়া,সুমন হাওলাদার,কলমী ইউনিয়নের জামাল মুন্সি এবং ওসমানগঞ্জের ইব্রাহীম মোল্লাসহ একাধীক কৃষক জানান, ধান ও সবজীর পাশাপাশি তরমুজ চাষে প্রচুর অর্থলগ্নী করতে হয়।
বৈরী আবহাওয়া না থাকলে কায়িক শ্রমে ভালো ফলন ও অধীক মূল্য পাওয়া যায়। তাই প্রতিবছর পৌষের শুরুতেই শুষ্ক মৌসুমে তরমুজ ও বাঙ্গির চাষ করেন এ চাষিরা। তবে অনেক মৌসুমেই বৈরী আবহাওয়ার জন্য ভালো ফলন না হওয়ায় লোকসানও গুনতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতী বছর করোনার প্রাদূর্ভাবের শুরুতেই তরমুজের ভালো ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় হতাশ হতে হয়েছে এসব চাষীদের। তারা আরও জানান, বাণিজ্যিকভাবে চরাঞ্চলগুলো পেঁয়াজ উৎপাদনের জন্য উপযোগী। এসব জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে আঞ্চলীক চাহীদা পুরণ করে রপ্তানী করাও সম্ভব। যদি সংশ্লিষ্ট দপ্তর প্রত্যেক উপজেলা ভিত্তিক পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরীসহ এসব কৃষকদের উন্নত জাতের পেঁয়াজের বীজ ও সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুতের বন্দোবস্ত এবং কৃষি ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দেন তাহলে তারা পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেশের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় অর্থনৈতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারবে বলে জানান চাষীরা।
কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে অন্যান্য বছরের চেয়ে গত ১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার ৬ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। এছাড়াও এ উপজেলায় আমন ধানের চাষাবাদ বেশি হওয়ায় ২০২০ ও ২১ অর্থ বছরে ৭০ হাজার ২৭৫ হেক্টর জমিতে আমন উফশি এবং স্থানীয় আমনের চাষ হয়েছে। পাইকাররা বলেন, ঝড় জ্বলোচ্চাসের কারণে বাম্পার ফলন না হলেও অধিক লোকসানে পড়েনি উপজেলার চাষীরা।
চরফ্যাসন উপ-সহকারী কৃষি অফিসার ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, এবছর লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৭৭ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৪ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি হেক্টরে পৌনে ৪ মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে। এ অঞ্চলের আমন ধান চাষে বীজতলা থেকে শুরু করে ফলন পরবর্তী ধানের গুদাম পর্যন্ত নিতে প্রায় ৫ মাস অর্থাৎ ১৫০ দিন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগলেও উন্নত মানের পেঁয়াজ ঘরে তুলতে প্রায় সাড়ে ৩মাস অর্থাৎ ১১৫ দিনের বেশি সময় লাগেনা বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিসার আবু হাসনাইন।
তিনি বলেন, বাজারে বীজ ধান-৬২ এবং বিনা ধান-২১ (জীবন কাল ১০০-১০৫দিন) এর নতুন জাতের ধানের বীজ রয়েছে। এই ধানের ফলন সাড়ে ৩ মাসে অর্থাৎ ১১৫ দিনের ভেতরে ঘরে তোলা সম্ভব। তিনি আরও বলেন, চরফ্যাসনে কৃষি সম্প্রসারনের লক্ষমাত্রা অনুযায়ী মরিচের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে ২৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু হাসনাইন পেঁয়াজের সম্ভাবনা নিয়ে কথা বললে তিনি জানান, জলবায়ুগত দিক থেকে পেঁয়াজ চাষে এ অঞ্চলের মাটিতে শুষ্ক মৌসুমে জলাবদ্ধতা হয়না এবং এখানকার মাটি দো-আঁশ,এটেল দো-আঁশ,বেলে দো-আঁশ এবং পলিযুক্ত মাটি হওয়ায় ভোলাসহ চরফ্যাসনের চরাঞ্চলগুলোয় পেঁয়াজের চাষ অধিক সম্ভাবনাময়।
তিনি আরও জানান, ২০২০-২১ অর্থ বছরে ৭শ ২৪ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদে সরকারী লক্ষ্য থাকলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি ও মরিচের সাথে আন্তঃফসল হিসেবে পেঁয়াজ চাষ সম্প্রসারণে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় চরফ্যাস সহ জেলায় এক হাজার হেক্টরের অধিক জমিতে পেঁয়াজ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে। আশা করি এক হাজার হেক্টরের অধীক জমিতে জেলার সর্বত্রই এ পেঁয়াজ উৎপাদন করা হবে। ফলে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন অন্যান্য বছরের চেয়ে এগিয়ে যাবে এবং আমদানী নির্ভরতা কমে যাবে।
জামাল মোল্লা / ইবি টাইমস