ইতালির সংসদে প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে সরকারের নিরঙ্কুশ বিজয়

ইতালির সংসদের ৬৩০ আসনের মধ্যে  বিপক্ষে ২৫৯ ভোট এবং ৫০ জন ভোটদানে বিরত 

ইতালি প্রতিনিধিঃ আজ মঙ্গলবার ইতালি সংসদের সিনেটের উচ্চকক্ষে ভোট অনুষ্ঠিত হবে ।উল্লেখ্য যে,গত ১৩  জানুয়ারী ইতালির বর্তমান কোয়ালিশন সরকার থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেনজির ছোট দল “Italia Viva” সমর্থন প্রত্যাহার করায় সরকার ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের নেতৃত্বাধীন সরকার সোমবার সংসদের নিম্নকক্ষে (ডেপুটিদের চেম্বার) আস্থাভোটের সম্মুখীন হয়ে জয়লাভ করেছেন।

ইতালির জাতীয় সংসদের সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৯৫১ জন। এর মধ্যে উচ্চ সিনেট কক্ষে ৩২১ জন যার মধ্যে ৩১৫ জন নির্বাচিত এবং ৬ জন বিশেষ সদস্য। নিম্নকক্ষে (ডেপুটি সিনেটের) মোট ৬৩০ জন। এরপর মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তের সরকার সংসদের উচ্চকক্ষে (Senato) সিনেটে আস্থাভোটের সম্মুখীন হবেন ৷ সেখানে ১৬১টি ভোট পেলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারবেন ৷ কিন্তু ১৫০ টির কম ভোট পেলে সরকার আস্থা হারাবে ৷ সেক্ষেত্রে বিরোধী শিবিরের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও সালভিনি’কে সরকার গঠনের জন্য আমন্ত্রন জানানো হতে পারে ৷ সিনেটে কোন পক্ষ যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমান করতে না পারে সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি সারজেও মাত্তারেল্লা হয়তো নতুন নির্বাচনের পথে হাটতে পারেন।

ইতালির জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা  “Gazzettino” জানিয়েছেন,সোমবার ইতালির সংসদের নিম্নকক্ষে (চেম্বার) বর্তমান নির্দলীয় প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্তের সরকার ৩২১ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে। সরকারের বিপক্ষে অর্থাৎ অনাস্থা ভোট পড়েছে ২৫৯ টি এবং ৫০ জন ভোটদানে বিরত ছিলেন।

ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী Luigi di Maio সংসদের নিম্নকক্ষে অর্থাৎ ডেপুটিদের চেম্বারে প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্তের সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি তার ফেসবুক একাউন্টে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে মাধ্যমে বলেন,  ডেপুটিদের চেম্বারে আমাদের সরকার নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আস্থা অর্জন করেছে। আসুন,এখন আমরা সবাই মিলে এক ইতালির জন্য প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্তের সাথে মিলে একত্রে কাজ করি। তিনি আরও বলেন,মহামারীটি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে না, অর্থনৈতিক সঙ্কট এগিয়ে চলেছে এবং আমাদের নিরপেক্ষ ব্যবস্থা নিয়ে সময় মতো হস্তক্ষেপ করা কর্তব্য। এই কারণেই সংকটজনিত পরিস্থিতিতে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের নতুন ত্রাণ ও সহায়তা দেওয়ার জন্য আমাদের এই সপ্তাহে সংসদে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বাজেটের ব্যবধানটি অনুমোদন করতে হবে।

সোমবার ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্তে চেম্বারে তাঁর বক্তৃতায় বর্তমান দেশের এই সঙ্কটময় মুহুর্তে একটি ভিত্তিহীন রাজনৈতিক সঙ্কটের জন্য অস্বস্তি প্রকাশ করেন এবং ইতালির ভবিষ্যতকে এক সাথে সবাই মিলে গড়ার অনুরোধ করেন। মঙ্গলবার ১৯ জানুয়ারী ইতালির সংসদের উচ্চতর সিনেটে চেম্বারে সরকারের আস্থা চেয়ে পুনরায় ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ভোট গ্রহণ সন্ধ্যা ১৯:৩০ মিনিটে শুরু হয়ে রাত ২০:৩০ মিনিটে শেষ হবে। ইতালির সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে সকাল ৯:৩০ মিনিটে সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত ভাষণের পর আস্থাভাজন হওয়ার জন্য চেম্বারে আলোচনা এবং বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

বিশেষত, কন্তের ভাষণের পর কমপক্ষে ২ ঘন্টা সংসদে বিতর্ক চলবে এবং তারপর ১২:৩০ মিনিটে সংসদের বিরতি। মধ্যান্হ বিরতির পর বেলা ১৩:৩০ মিনিটে পুনরায় সংসদের কার্যক্রম শুরু হবে এবং প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী সংসদে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা এবং সরকারের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া হবে। বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে একটি উত্তর আসবে এবং তারপরে ভোটের প্রস্তুতির জন্য আরও ৬০ থেকে ৯০ মিনিটের বিরতি নেয়া হবে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত আটটা ত্রিশ পর্যন্ত সংসদের উচ্চ কক্ষের সন্মানিত সদস্যরা তাদের আস্থা ও অনাস্থা ভোট প্রদান করবেন।

সোমবার সংসদের নিম্নকক্ষে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ১৩ ই জানুয়ারী এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের জোটের ছোট দল “ইটালিয়া ভিভার” মন্ত্রীদের পদত্যাগের ফলে সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রশ্ন উঠেছে এবং স্বভাবতই একটি রাজনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি আরও বলেন বর্তমান করোনা মহামারীর সময় এই রাজনৈতিক সঙ্কট দেশে গভীর হতাশার সৃষ্টি করেছে এবং এই সঙ্কটের কারনে দেশ যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। দেশের ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতালির ভাবমূর্তি যথেষ্ট ক্ষুন্ন হচ্ছে। সংসদের নিম্নকক্ষে অর্থাৎ ডেপুটিদের চেম্বারের আস্থা ভোটের পূর্বে কন্তে আরও বলেন,”আমার একটি অত্যন্ত স্পষ্ট আবেদন যে,আমাদের সরকারের খুব সুনির্দিষ্ট এবং উন্নয়নের মেগা প্রকল্প রয়েছে যা দেশকে আরও আধুনিক করে তোলার লক্ষ্যে সাহায্য করবে। আপনাদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। ইতালির জন্য আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলি অপেক্ষা করছে, তাদের জন্য – সম্ভাব্যতম সংহতি, সংসদে বিস্তৃত একতা দরকার। আমাদের প্রয়োজন একটি শক্তিশালী ঐক্যের সরকার। আমাদের সকলেরই দেশের এই ক্রান্তিকালে নিজেদের স্বার্থপরতা এবং ব্যক্তিগত লাভ লালসা পরিহার করতে হবে।

বৈশ্বিক মহামারী করোনায় বিশ্বে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ সমূহের মধ্যে ইতালি অন্যতম। ইতালিতে এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩ লক্ষ ৯০ হাজার ১০১ জন। করোনায় এই পর্যন্ত মৃত্যুবরণ করেছেন ৮২,৫৫৪ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ১৭ লক্ষ ৬০ হাজার ৪৮৯ জন ।

ইয়াসমিন পুতুল/ ইউবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »