আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ উত্তর ইউরোপের স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়েতে করোনার প্রতিষেধক হিসেবে ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর ২৩ জন বয়স্ক মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে। নরওয়ে সরকারের গঠিত বিশেষজ্ঞ দল এই মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করতে শুরু করেছেন।
প্রাথমিকভাবে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, মৃত্যুবরণকারী সকলেরই বয়স ৮০ বৎসরের উপরে যারা এমনিতেই ভগ্নস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে ভ্যাকসিন গ্রহণ করার মতো যে পরিমান শক্তি ও সামর্থ্য দরকার তাদের শরীরে সে পরিমাণ ছিল না। এখানে উল্লেখ্য যে,করোনার ভ্যাকসিন নিজেই একটি ভাইরাস। ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনটি শিম্পান্জিদের সংক্রমিত করে এমন একটি ভাইরাসের জিনগত পরির্তন করে তৈরী করা হয়েছে। সাধারণত এই ভ্যাকসিন ভাইরাস শরীরে পুশ করলে কোন ক্ষতি হওয়ার কথা না। তারপরও ১০০ ভাগ নিশ্চিয়তা দেওয়া খুব কঠিন।
ফাইজারের ভ্যাকসিন নেওয়ার এক সপ্তাহ পর প্রথম মৃত্যুবরণ করেন মেক্সিকোর একজন সিনিয়র সিটিজেন। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ৫৩ বৎসর বয়স্ক একজন ডাক্তার মস্তিষ্কের রক্ত ক্ষরণে মৃত্যুবরণ করেছেন। তার স্ত্রীর অভিযোগ তিনি গত সপ্তাহে করোনার ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন গ্রহণের কারনেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ভ্যাকসিন গ্রহণের পর ২৩ জন বয়স্ক মানুষের মৃত্যুর পর নরওয়ের মেডিকেল ডিরেক্টর স্টেইনার ম্যাডসেন নরওয়ের ব্রডকাস্টার এনআরকে বলেছেন, “আমরা এতে উদ্বেগিত হই নি।” “এটি পুরোপুরি স্পষ্ট যে এই ভ্যাকসিনগুলির ঝুঁকি খুব সামান্যই রয়েছে যা পরীক্ষিত।” তাছাড়াও বর্তমান সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ ইতিমধ্যেই এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। আমাদের দেশে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তারা এমনিতেই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের লোক। আমরা এখনও তাদের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধান করছি। ফাইজারের ওই ভ্যাকসিন এবং মৃত্যুর মধ্যে সরাসরি কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দেখা গিয়েছে, এই টিকা গ্রহণের পর যে ২৩ জন নরওয়ের নাগরিক মারা গিয়েছেন তাদের মধ্যে ১৩ জনেরই বয়স ৮০ বৎসরের উপরে। জানা গেছে, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর তাদের শরীরে জ্বর-ডায়েরিয়াসহ আরও বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল।
এই মৃত্যু ঘিরে সমগ্র ইউরোপ সহ বিশ্বে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় ফাইজার ও বায়োএনটেক সাময়িকভাবে ইউরোপে তাদের ভ্যাকসিন সরবরাহের হার কমিয়ে দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদের এক বিশেষ অধিবেশনেও অস্ট্রিয়ায় ফাইজার ও বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কয়েকজন বয়স্ক লোকের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন। তবে তিনি কারও মৃত্যু বা এ সম্পর্কে বিস্তারিত আর কিছুই বলেন নি। এই ঘটনার পর নরওয়েতে ফাইজারের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে যে খবর বেড়িয়েছে সে সম্পর্কে নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ জানিয়েছে,কমানোর কারণ উৎপাদনের সীমাবদ্ধতা। ফাইজারের বর্তমান বার্ষিক উৎপাদন ১,৩ বিলিয়ন ডোজ।
নরওয়েজিয়ান ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক হেলথ জানাচ্ছে, যাদের বয়স ৮০ বৎসরের বেশী অর্থাৎ যাদের জীবনদৈর্ঘ্য খুবই ছোট হয়ে আসছে তাদের উপর এই ভ্যাকসিন প্রয়োগে তেমন কিছু সুবিধা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জার্মানি ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ব্লুমবার্গ। করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার শুরুর পর থেকে নরওয়েতে ফাইজার অথবা মর্ডানা করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম প্রদান প্রান্তিকে এই পর্যন্ত ৩০,০০০ হাজার মানুষের শরীরে পুশ করা হয়েছে। ২৩ জনের মৃত্যুর পর বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, ডাক্তাররা যেন সাবধানতা অবলম্বন করে কাকে কাকে ভ্যাকসিন দেওয়া যায়। যারা মারা গিয়েছেন তারা ছাড়াও ২১ জন মহিলা এবং ৮ জন পুরুষেরও বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ৯ জনের উপর সিরিয়াস রকম সাইড এফেক্ট হয়েছে এবং ৭ জনের তুলনায় কম সাইড এফেক্ট লক্ষ্য করা গিয়েছে। ৯ জনের এলার্জিগত রিয়াকশন হয়েছে বলে নরওয়ের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
নরওয়েতে আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১১৫ জন। এই পর্যন্ত করোনার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৮,৩১৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫১৭ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ৪৬,৬১১ জন।
কবির আহমেদ/ ইউবি টাইমস