ইউরোপে যাওয়ার আশায় বসনিয়ার জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের নাগরিক

নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশীসহ এক হাজারেরও বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী মানবেতর জীবন-যাপন করছে বসনিয়ার সীমান্তে। বর্তমানে প্রচন্ড তুষারপাত ও তীব্র ঠান্ডায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে উন্নত জীবনের সন্ধানে বাংলাদেশ, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ মধ্যপ্রাচ্য আর উত্তর আফ্রিকার শরণার্থীদের জন্য ২০১৮ সালের পর থেকে বসনিয়া হয়ে উঠেছে সীমান্ত পার হওয়ার এক নতুন ‘ট্রানজিট রুট।এর পাশপাশি সার্বিয়াতেও প্রায় ২ শতাধিক বাংলাদেশী আটকা পড়ে আছে ইউরোপে প্রবেশের প্রত্যাশায়। কেউ কেউ দীর্ঘ এক বছর ধরে অপেক্ষা করছেন সীমান্তবর্তী ক্রোয়েশিয়া পাড়ি দিয়ে ইউরোপে যাওয়ার জন্য। অনেকে আবার গোপনে ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত পারি দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলেও পুলিশ তাদের মারধর করে পুনরায় বসনিয়ায় ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে।

ইউরোপে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই ইইউর দেশ সমূহ তাদের সীমান্তে নজরদারি জোরদার করেছে। ফলে অবৈধ অভিবাসীরা আগের মত আর সহজেই ইইউ তে প্রবেশ করতে পারছেনা।

গত আগস্ট মাসে স্লোভেনিয়ার সীমান্ত দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে কয়েকজন বাংলাদেশীসহ অবৈধ অভিবাসীদের একটি দলকে অস্ট্রিয়ার সীমান্ত পুলিশ আটকে দেয়। পরে পুলিশ তাদেরকে অবৈধভাবে অস্ট্রিয়ায় প্রবেশের অপরাধে জেলে পাঠিয়েছে।।করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে হয়তোবা অস্ট্রিয়ান সরকার তাদেরকে নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিবে।

করোনার প্রথম ধাক্কা ইউরোপের দেশ সমূহ কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও দ্বিতীয় দফায় বেশিরভাগ দেশের অর্থনীতিই চাপের মধ্যে পড়েছে। কাজেই ইউরোপের দেশ সমূহ বর্তমানে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির রোধে এবং অবৈধ অভিবাসীদের স্রোত ঠেকাতে সীমান্তে কঠোরতা অবলম্বন করেছে।

এদিকে, গত ২৩ ডিসেম্বর উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ার লিপা শরণার্থী শিবিরে আগুন লেগে শরণার্থীদের শিবিরগুলি সম্পূর্ণ ভষ্মীভূত হয়ে যায়। প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে শরণার্থীরা খোলা আকাশের নীচে বসবাস করতে থাকলে ইইউসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বসনিয়া সরকার তার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তাদের জন্য অস্থায়ী কয়েকটি তাবু তৈরি করে ক্যাম্প করে দেয়।

বসনিয়ায় আটকে পড়া শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে ইউরোপের কোনো দেশ এখন পর্যন্ত রাজি হয়নি। বসনিয়াও স্থায়ীভাবে এই শরণার্থীদের রাখতে আগ্রহী নয়। যে কারণে, তাঁদের জন্য কোনো স্থায়ী ব্যবস্থাও করা হচ্ছে না। শরণার্থীদের অভিযোগ, ক্রোয়েশিয়া সীমান্তে তাঁদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে সেখানকার পুলিশ। সব মিলিয়ে এই তীব্র শীতে চরম ভোগান্তি শরণার্থীদের। আর জাতিগত দ্বন্দ্বে বিভক্ত দারিদ্র্যপীড়িত বসনিয়া সরকারের এই সঙ্কট সামাল দেয়ার মত অবস্থা নেই। ফলে বহু মানুষের জন্য সেখানে আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করা যাচ্ছেনা।

আফগানিস্তান থেকে আসা ১৬ বছরের আলীর আশ্রয় হয়ে উঠেছে পরিত্যক্ত একটি বাসে। বিহাকের শরণার্থী ক্যাম্প ছাড়ার পর গত ছয় মাস ধরে ওই বাসের মধ্যেই ঘুমায় সে। লন্ডন ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে সে জানায় “আমার অবস্থা আসলে ভালো না। এখানে আমাদের দেখার কেউ নেউ। এ জায়গা মোটেও নিরাপদ না।” “যারা সাহায্য করার নাম করে আমাদের এখানে আসে, তারা আমাদের জিনিসপত্র নিয়ে যায়, তারপর সেসব জিনিস বিহাকের শরণার্থী ক্যাম্পে, নয়ত অন্য কোথাও বিক্রি করে দেয়। এখানে আমাদের আর কিছুই নেই, আমাদের সাহায্য করুন।” অন্য একজন বলেন, ‘অনেকেরই এখানে উষ্ণ কাপড় নেই, জুতা নেই এবং ঠাণ্ডায় আমরা যে মারাও যেতে পারি।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার কর্মকর্তা নাতাশা ওমারোভিক বলেন, ‘অনেক শরণার্থী তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছে। আবার অনেকে বসনিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত পরিত্যক্ত ঘরগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে।দৈনন্দিন চাহিদা ও প্রয়োজনীয় খাদ্যের কোনো নিশ্চয়তা নেই তাদের। অভিবাসীদের সঙ্কট সমাধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবারও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা।

কবির আহমেদ/ইউবি টাইমস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »