ইতালি : ইতালির জোট সরকারের ক্ষুদ্র দল সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাত্তেও রেঞ্জির ইটালিয়া ভিভা কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজনৈতিক বাকবিতন্ডার পর বুধবার তার মন্ত্রীদের সরকার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ফলে নির্দলীয় প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্প কন্টির নেতৃত্ব এবং সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটস (পার্টিটো ডেমোক্রেটিকো, পিডি) জোটের সংসদে আর পর্যাপ্ত সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
কৃষিমন্ত্রী টেরেসা বেলানভা এবং পরিবার মন্ত্রী এলেনা বোনেটি তাদের পদত্যাগ জমা দিয়েছেন। পদত্যাগের কারন হিসাবে বলা হয়েছে বুধবার রাতে সরকারের পাস করা মাল্টি-বিলিয়ন ডলারের করোনার সহায়তা প্রোগ্রাম “রিকভারি প্ল্যান” নিয়ে “ইতালিয়া ভিভা”দলের সরকারের সাথে মতানৈক্য বা বিভক্ততার কারনে । ইতালির রাজ্য সচিব বা স্টেট সেক্রেটারি ইভান স্কালফারোটোও পদত্যাগ করেছেন, যিনি “ইটালিয়া ভিভা” এর একজন অন্যতম সদস্য।
ইতালি থেকে প্রকাশিত বাংলা অনলাইন পোর্টাল “ইতালি দর্পণ” লিখেছেন,ইতালির জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে’কে পদত্যাগে বাধ্য করতে রাজনৈতিক ভাবে কূটকৌশল অবলম্বন করে চলছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী (২০১৪-২০১৬) মাত্তেও রেঞ্জি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে শেষ দিন পর্যন্ত জনগনের কল্যানে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন ৷ মাত্তেও রেঞ্জির বিরোধীতা সত্ত্বেও ইতালিতে আবারো জরুরী অবস্থার মেয়াদ ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং নতুন করে পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা তৈরির ঘোষনা দিয়েছেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার ১৪ জানুয়ারী সন্ধ্যায় ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী লুইজি দি মাইও,আবারো ইতালির বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। তিনি স্থানীয় একটি সম্প্রচার কেন্দ্রে এক সাক্ষাৎকারে বলেন,করোনা পরিস্থিতির কারনে বর্তমানে ইতালির অর্থনীতি অনেক সংকটময়। এখন আমাদের দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক কাজ করতে হবে । এমতাবস্থায় আমাদের রাজনীতি চলমান থাকা সবার জন্য ভালো। আমাদের অপচয় করার মতো সময় এখন আর হাতে নেই। বর্তমান সরকার স্থিতিশীল থাকলে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল ৷ তাই সবাইকে সরকারের গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে ৷ সেই সাথে তিনি ও তার দল আগামী দিন গুলোতে প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে’কে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন৷
করোনা মহামারীর এ দুঃসময়ে সরকারের ক্ষতি করা মানে ইতালি তথা ইতালির প্রত্যেকটি নাগরিককে ক্ষতিগ্রস্থ করার সামিল৷ যারা দেশের জনগনের ক্ষতি চায় তাদের পক্ষ নিয়ে আমরা দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের পরিচয় দিতে পারি না ৷ আমাদের অবশ্যই অর্থনৈতিক সঙ্কটের স্বীকার অসহায় পরিবার, বেকার শ্রমিক, দুস্থ ব্যবসায়ী ও স্ব-কর্মসংস্থানকারীদের ত্রাণ ও সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করতে হবে। ইতালির বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে কে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তিনি বলেন,তার যোগ্য নেতৃত্বেই ইতালি বর্তমান পরিস্থিতি সামলিয়ে উঠতে পারবে। কোয়ালিশন সরকারের ভাঙ্গন সত্ত্বেও আস্থা ফিরিয়ে আনতে অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে আগামী সোমবার জাতীয় সংসদে ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে। ইতালির বর্তমান সংসদের মেয়াদ ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা।
ইতালিতে ১৪ জানুয়ারী বৃহস্পতিবার করোনায় নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১৭,২৪৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৫২২ জন। এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩,৩৬,২৭৯ জন এবং মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৮০,৮৪৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছেন ১৬,৯৪,০৫১ জন। ইতালিতে প্রায় ২ লক্ষাধিকের উপরে প্রবাসী বাংলাদেশী বসবাস করেন। করোনার প্রথম প্রাদুর্ভাবের সময় প্রবাসীরা কিছুটা কম সংক্রমিত হলেও দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় কয়েক শতাধিক প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী এই পর্যন্ত প্রায় ২০ জনের মত মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইয়াসমিন পুতুল/ইউবি টাইমস