ভালো নেই ভোলার চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ

সাব্বির আলম বাবু,ভোলা: ভালো নেই ভোলার চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষেরা।সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলেছে। জানা নেই আদৌ রান্না হবে কি না। তরকারি তো দূরের কথা,এ বেলার দু’মুঠো চালও ঘরে নেই। দিনের আয়ে দিন চলে। কাজ না পেলে ধার-দেনার বোঝা বাড়ে। তাই বাধ্য হয়ে কেউ দুবেলা কিংবা এক বেলা খেয়ে দিন কাটায়।পরিবার-পরিজন নিয়ে এমন সংকট,দিন আনা-দিন খাওয়া মানুষ গুলোর নিত্যদিনের সঙ্গী। কষ্টের দিনগুলো কিছুতেই শেষ হতে চায় না এদের। তাই কাজ করলে খাবার জোটে,আর না করলে না খেয়ে থাকতে হয় ভোলার চরাঞ্চল আর বেড়িবাঁধের মানুষ গুলোর।

চরমনোহর, চরলিউলিন, চর মোতাহার, ধলারচর, ঢালচর, চরপাতিলা, কলাতলীর চর, চরনিজাম, চর কুকরি মুকরি, শিকদার চরের মতো এমন আরো অনেক চরের মেঠোপথ পাড়ি দিতে হয় হেঁটে। নেই কোনো যানবাহন। তবু এখানে জীবন চলে জীবনের প্রয়োজনে। এখানে দিনের পর দিন বেঁচে থাকবে অভাবী মানুষের অনাহার আর অর্ধাহারের গল্প।সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন  চরাঞ্চল আর বেড়িবাঁধ ঘুরে সেখানকার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে উঠে আসে এমন সব জীবন চালিয়ে নেওয়া কষ্টের কথা।

এ সময় কথা হয় চরফ্যাশন উপজেলার বকসীঘাটের খেয়া নৌকার মাঝি মো. জামালের সঙ্গে।দিনভর তেঁতুলিয়ার বুকে খেয়া পারাপারে যাত্রীর অপেক্ষায় সময় কাটে তার।দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থেকে যে যাত্রীর দেখা মেলে তা পার করেই সংসার চলে।এ পারে বকসীঘাট ওপারে বাংলাবাজার। চার-পাঁচজন যাত্রী হলেই ছোট্ট নৌকাটি এপার থেকে ওপারে নিয়ে যান মোহাম্মদ আলী। দিনভর নৌকার দাঁড় টেনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা মেলে। এ দিয়েই কোনোমতে চালিয়ে নিতে হয় সংসার।

বেড়িবাঁধের উপরে একটি দোকানের সামনে  মানুষের আড্ডা চলছে। তাদের সেই আড্ডায় ইউরো বাংলা টাইমসের প্রতিনিধির শামিল হতে না হতেই বেরিয়ে আসে আরো কিছু  কষ্টের গল্প।কর্মহীন মানুষ গুলো কেউ ছোট ব্যবসা করে, কেউ নৌকা চালিয়ে, কেউ মাছ ধরে, কেউ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় অনেকে পাড়ি জমিয়েছে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলায়। শীত মৌসুম সামনে রেখে অনেকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ইটভাটার কাজে ছুটেছে।

এ সময় কথা হয় চর-মোতাহারের বাসিন্দা নূরে আলম, জাবির হোসেন, মইনুল ইসলাম, মজিবুল্লাহ, হাবিবুর রহমান, মহিউদ্দিন, আবদুস সামাদসহ আরো অনেক শ্রমজীবীর মানুষের সঙ্গে। তারা জানালেন, শীত মৌসুমে এলাকার মানুষের কষ্টটা আরো বেশি। এক বেলা ভাত জোগাড়ের কষ্ট কতটা তীব্র এই এলাকার মানুষ তা হাড়ে হাড়ে টের পায়। তাই আসন্ন শীত নিয়ে চিন্তাভাবনায় দিন কাটছে এসব খেটে খাওয়া মানুষের। তবে এদের পুনর্বাসন করার ব্যবস্থা নেবে সরকার এবং দাতা গোষ্ঠীগুলো এমনটাই প্রত্যাশা এসব মানুষের। এদিকে বেসরকারি এনজিও গ্রামীণ জন-উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. জাকির হোসেন মহিন দৈনিক ইউরো বাংলা টাইমস কে বলেন, গ্রামীণ উন্নয়ন ও  কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভোলার বিভিন্ন চরে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তারা প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সহায়তা দিয়ে ৫০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া ক্ষুদ্রঋণ  প্রকল্পের আওতায় আরো ১ লাখ ৭০ হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের জীবন মানোন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে তারা কাজ করে যাবে বলে জানান সংস্থাটির প্রধান এই কর্মকর্তা।

ভোলার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক জানান, চরাঞ্চলের প্রান্তিক মানুষের দারিদ্র্য দূরীকরণে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভিজিডি প্রকল্প, ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প, গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ এবং ঋণদান কর্মসূচি রয়েছে। এছাড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প গ্রামীণ প্রান্তিক মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্র সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে তুলছে। প্রতিটি এলাকায় এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ কাজে সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »