অন লাইন ডেস্ক থকে,কবির আহমেদঃ আজ ১৩ জানুয়ারী বুধবার সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শিক্ষামন্ত্রী আগামী ২৫ জানুয়ারী থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত সতর্কতার সাথে খোলার ঘোষণা দিয়েছেন। বৃটেনের নতুন রূপান্তরিত ভাইরাসের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল অস্ট্রিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারী মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ রাখতে। গতকাল সরকারের বিভিন্ন সূত্রের উদ্ধৃতি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমেও বলা হয়েছিল স্কুল খুলছে সেমিস্টারের ছুটির শেষে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারীর দ্বিতীয় সপ্তাহে। অবশ্য শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন সতর্কতার জন্য প্রথম লকডাউনের মতোই ক্লাশ ভাগ করে পাঠদান করা হবে। অর্থাৎ প্রতিটি ক্লাশের শিক্ষার্থীদের দুইভাগে ভাগ করে একদিন পর পর স্কুলে যেতে হবে ।
এদিকে আজ সকালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংসদের এক বিশেষ অধিবেশনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার (গ্রীনস) জানান, অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাসে আক্রান্ত কমপক্ষে ৭০ জন সনাক্ত হয়েছেন। ধীরে ধীরে টিকা দেওয়ার প্রচারণা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার (গ্রীনস) এর কাছে “টিকাদানে বিশৃঙ্খলা” কেন ? এই জাতীয় প্রশ্নগুলির সমাধান করার জন্য,বিরোধীদলের অনুরোধে স্পিকার বুধবার জাতীয় সংসদ বা কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিলেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুডল্ফ আনস্কোবার সংসদে বলেন,আমি সত্যটি সম্পর্কে সন্তুষ্ট, কারণ এটি আমাকে খুশি করেছিল,করোনার গণ ভ্যাকসিনগুলি ত্বরান্বিত করার উপায়গুলি নিয়ে বিরোধী শিবিরে আলোচনা হয়েছে। তারপর তিনি সংসদকে অবহিত করেন, বর্তমানে অস্ট্রিয়ায় বৃটেনের মিউটেশন ভাইরাসে আক্রান্ত ৭০ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন,এই সংখ্যা আরও দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
করোনার ভ্যাকসিন দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনুমোদিত ভ্যাকসিনগুলির সরবরাহের পরিমাণ বর্তমানে আরও সীমাবদ্ধ । সংক্রমণের সংখ্যা হ্রাস এবং টিকাদান প্রচারের পাশাপাশি, ফেডারাল সরকারের তাত্ক্ষণিক লক্ষ্যগুলিতে এখন করোনার পরিবর্তনগুলির সীমাবদ্ধতাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে । স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন,ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে করোনার ভ্যাকসিন হ’ল একমাত্র অস্ত্র। কখন এই অনুমোদন দেওয়া হয় এবং কখন ডেলিভারি দেওয়া হয় তার উপর ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নির্ভর করে।
আনস্কোবার ইসরাইলের সাথে তুলনা করার সমালোচনা করে বলেন,রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী ইসরাইল তার দেশের সিংহভাগ জনগণকে বিশ্বের প্রথম দেশ হিসাবে ভ্যাকসিন প্রদান সম্পন্ন করেছে। ইসরাইল তার ভ্যাকসিন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রহণ করেছে। আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রয় ও সরবরাহের উপর নির্ভরশীল। মন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, অস্ট্রিয়ার মত একটি ছোট দেশের জন্য বিষয়গুলি তেমন একটা সহজসাধ্য না। তিনি আরও বলেন,আমাদের দেশে করোনার ভ্যাকসিনের সফল পাইলট পর্বের পরে, এখন গণ টিকা প্রচার প্রচারণা চলছে এবং এটি কঠিন পরিস্থিতিতেও সন্তোষজনক। বর্তমানে দেশে প্রায় ৩৩,০০০ হাজার বায়োএনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন,অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনার ভ্যাকসিন দেয়ার পর ১১ জন সিনিয়র সিটিজেনেল পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল। তবে এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলির পরিমাণ সম্পর্কে মন্ত্রী আর কোনও তথ্য দেননি। এটা পরিষ্কার যে বয়স্ক নার্সিংহোম এবং বিভিন্ন বৃদ্ধাশ্রমে ভ্যাকসিন দেয়ার গতি অন্যান্য স্থানের চেয়ে কিছুটা ধীরগতিতে করতে হচ্ছে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিরোধী দলের SPÖ এর চেয়ারপার্সন ডা.পামেলা রেন্ডি-ভাগনারের “গতি বাড়ানোর” দাবীকে সমর্থন করেছেন। তবে মন্ত্রী এই বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে বলেন,অস্ট্রিয়া ই ইউ পর্যায়ে আলোচনার কাঠামোর বাইরে অতিরিক্ত ভ্যাকসিনের ডোজ গ্রহণ করলে,এটি চুক্তি লঙ্ঘন হতে পারে ।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ১,৯১৭ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৪৯ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছে ৩৬১ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৩৮৩ জন,OÖ রাজ্যে ৩০২ জন, Steirmark রাজ্যে ২৯৬ জন,Salzburg রাজ্যে ১৮৮ জন, Kärnten রাজ্যে ১৬৫ জন,Tirol রাজ্যে ১০৪ জন, Voralberg রাজ্যে ৫৯ জন এবং Burgenland রাজ্যেও ৫৯ জন নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছে।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৮৫,৭৫০ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছে মোট ৬,৮৬৮ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত আরোগ্য লাভ করেছে মোট ৩,৫৯,৬৯২ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ১৯,১৯০ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছে ৩৫৪ জন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২,১৭৯ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।