ভিয়েনা থেকে,কবির আহমেদঃ গতকাল অস্ট্রিয়ার সংবাদ মাধ্যমের সাথে এক সাক্ষাৎকারে দেশের শীর্ষ সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্ট এবং ভিয়েনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের “সেন্টার ফর ভাইরোলজি” বিভাগের প্রধান ৫৮ বৎসর বয়স্কা এলিজাবেথ পুচামার-স্ট্যাকল বলেন,আমাদের জন্য “পরের কয়েকটি মাস খুব কঠিন হবে।” এই বৎসরের অস্ট্রিয়ার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হিসাবে নির্বাচিত ভাইরোলজিস্ট এলিজাবেথ পুচামার-স্ট্যাকল বলেন, বর্তমানে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হলেও এর সুফল পেতে আমাদের আরও কয়েকমাস লেগে যাবে। তিনি সরকারকে সতর্ক করে বলেন,SARS-CoV-2 অর্থাৎ কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার রোধ হালকা লকডাউনে প্রতিরোধ করা সম্ভব না।
তিনি বলেন,সমগ্র ইউরোপ সহ অস্ট্রিয়ায় পুনরায় করোনার সংক্রমণের বিস্তার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। তিনি জনগণের উদাসীনতারও সমালোচনা করেন। এই অব্যাহত সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে আগামী কয়েকটি মাস অর্থাৎ গ্রীষ্মের পূর্ব পর্যন্ত আমাদের করোনার সংকটের মধ্যেই থাকতে হবে। তিনি জানান,ইউরোপে করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গে সংক্রমণ অব্যাহত বৃদ্ধি এবং তার উপর বৃটেনে করোনার পরিবর্তিত রূপের প্রাদুর্ভাবের ফলে সমগ্র ইউরোপ এক নতুন আতঙ্কে ভুগছে। ইংল্যান্ডে সৃষ্ট করোনার ভাইরাসের পরিবর্তিত রূপ ইতিমধ্যেই বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। অস্ট্রিয়াতেও বর্তমানে এই পরিবর্তিত ভাইরাসের উপস্থিতি সনাক্ত হয়েছে। তিনি এই সমস্যা থেকে দ্রুত উত্তোরণের জন্য সকলকেই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন,যারা ভ্যাকসিনের বিরোধীতা করছে তাদের তিনি পরিবর্তিত ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে হুঁশিয়ার করেন। ইংল্যান্ডের এই পরিবর্তিত করোনার ভাইরাসটি শিশুদের বেশী মাত্রায় সংক্রমিত করছে। যা সত্যিই সকলকে বেশ চিন্তিত করে তুলেছে। কীভাবে এই ভ্যাকসিন কাজ করে? আসলে ভ্যাকসিন নিজেও একটি ভাইরাস। বায়োএনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিনটি শিম্পাঞ্জিদের সংক্রমিত করতে পারে এমন একটি সাধারণ ঠান্ডা- জ্বরের ভাইরাসের মধ্যে জিনগত পরির্তন এনে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে এটি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে এবং এর মধ্যে রয়েছে করোনা ভাইরাসের মূল নকশার একটি অংশ, যা কিনা ‘স্পাইক প্রোটিন’ নামে পরিচিত। যখনি এই মূল নকশাটিকে শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখনি সেটি মানবদেহে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে শুরু করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন এটিকে একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে যখন ওই ব্যক্তি আসল ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, তখন তার শরীর আগে থেকে জানবে যে কীভাবে এই ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা যায়।
অস্ট্রিয়ান সংবাদ সংস্থা এপিএ জানিয়েছেন,দেশের শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট এলিজাবেথ পুচামার-স্ট্যাকল ২০২০ সালের অস্ট্রিয়ার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী নির্বাচিত হওয়ায় “বিজ্ঞানী ক্লাব অফ এডুকেশন অ্যান্ড সায়েন্স জার্নালিস্টস” তাকে সম্মান জানিয়ে এক সম্বর্ধনা ও পুরস্কৃত করেছেন। ইতিপূর্বে অস্ট্রিয়ার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী ও সাংবাদিকদের যৌথ এই ক্লাব কর্তৃক ভাইরোলজিস্ট এলিজাবেথ পুচামার-স্ট্যাকলকে “২০২০ সালের অস্ট্রিয়ার শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী” হিসাবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বৎসর এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে এই ক্লাবটি তাদের কাজ এবং তাদের বিষয়টিকে আরও বিস্তৃত জনগণের কাছে বোধগম্য করার জন্য এবং এভাবে অস্ট্রিয়াতে বিজ্ঞান এবং গবেষণার খ্যাতি বাড়াতে গবেষকদের প্রচেষ্টার মূলত সম্মান করতে চায়।
ভাইরোলজিস্ট ও বিজ্ঞানী এলিজাবেথ পুচামার- স্ট্যাকল ১৯৬২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ভিয়েনা শহরে চিকিৎসা শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। ১৯৮৬ সালে চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ডক্টরেট শেষ করার পরে ভাইরোলজিতে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি স্বাস্থ্য এবং মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ এবং ভাইরাসবিদ্যায় বিশেষজ্ঞ হিসাবে তার প্রশিক্ষণ শেষ করেন। তিনি তার গবেষণায় বৈজ্ঞানিকভাবে, তথাকথিত “ধ্রুবক ভাইরাস” গুলিতে মনোনিবেশ করেন, অর্থাৎ হার্পের ভাইরাসগুলির মতো রোগজীবাণু যা সংক্রমণের পরে আজীবন দেহে থাকে এবং এর প্রভাব ফেলা নিয়ে গবেষণা ও কাজ করেন। করোনাভাইরাস সম্পর্কিত, তিনি এবং তার দল গবেষণা করছে, অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে, “প্রাকৃতিক ঘাতক কোষ” এর প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা সংক্রমণের একেবারে প্রথম দিকে। তিনি ২০০০ সালে ভাইরাসোলজি কেন্দ্রের সহযোগী অধ্যাপক হয়েছিলেন এবং ২০১৮ সালের পর্যন্ত এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। পূর্ববর্তী বৎসরের ডিসেম্বরের শুরুতেই পুচামার- স্ট্যাকল, যিনি ট্রাফিক লাইট কমিশনের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রিয়ার করোনার কমিশনের একজন অন্যতম সদস্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।