ভোলা: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসুদের পিপাসা মেটাতে আকর্ষণ করছে ভোলা জেলার চারদিকে সাগরকন্যা মনপুরার ‘দখিন হাওয়া সী-বীচ’। দখিনা হাওয়া সী-বিচ’ নাকি ‘মনপুরা সমুদ্র সৈকত’! নামকরনের টানা-পড়েনে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্কের ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। যে যেই নামেই ডাকুক-ব্যক্তিগত ও গ্রুপ করে প্রচারনা আর মন্তব্যের সুবাদে ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’র নাম পৌছে যায় ভ্রমন উৎসুক মানুষের মনে। তাইতো বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপ আর লকডাউনের এক ঘেয়েমি উপেক্ষা করে অনেকেই আসছেন মনপুরায়।
কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতোই দেশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত এখন ভোলার ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’। সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, মায়াবী হরিণ, সোনালী ধান আর ম্যানগ্রোভ বনানী ঘেরা মনপুরায় পর্যটকদের আকর্ষনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এই বালুকাময় সমুদ্র সৈকতটি। মেঘনা বেষ্টিত দ্বীপ উপজেলার দক্ষিনভাগে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউয়ে বালি জমে গড়ে উঠেছে এক কিলোমিটার লম্বা সমুদ্র সৈকত। এটি উপজেলার দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়নের সর্বদক্ষিনে রহমানপুর গ্রামে অবস্থিত। সৈকতটি প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠলেও গত ৫/৬ বছর যাবত কারো নজরে আসেনি সেভাবে। স্থানীয় দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ অলিউল্লাহ কাজল ও তার সহধর্মিনী সাথী কাজলের উদ্যোগে শরু হয় এই সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে স্থানীয় যুবকদের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবী কমিটি গঠন করে পদযাত্রাশুরু ।
প্রথমে চারটি বেঞ্চি, চারটি ছাতা বসিয়ে পর্যটকদেরকে আহবান করা হয় সৈকতে। পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে পর্যায়ক্রমে প্রায় অর্ধশতাধিক ছাতা ও বেঞ্চির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেইসাথে ছনের তৈরী একাধিক গোলঘর, বৈঠকখানা, দোলনা, হ্যামোক, স্থাপন করা হয়েছে সৈকতে। পাশাপশি পর্যটকদের সুরক্ষায় লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। সময়ের চাহিদা অনুযায়ী এই সৈকত টির নাম দেয়া হয় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী বিচ’। নাম নিয়ে শুরু হয় নানা সমিকরণ। ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। কারো এটা পছন্ধ আবার কারো ওটা। অবশেষে সকল বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের মুখে শ্রুতিমধুরতা পায় ‘মনপুরা দখিনা হাওয়া সী বিচ’। এতসব আলোচনা সমালোচনা ‘দখিনা হাওয়া সী বিচ’কে পৌছে দেয় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমন পিপাসুদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর প্রচারের ফলে মহামারী করোনা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসতে শুরু করেন ভ্রমন বিলাসী মানুষ। সেই থেকে সৈকতটিকে সাজাতে আরো বেশি তৎপরতা বেড়ে যায় উদ্যোক্তাদের। আনুষ্ঠানিক ভাবে সমুদ্র সৈকতটি উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী। তারপর থেকে এই সুমদ্র সৈকত পরিদর্শনে আশা শুরু করেন প্রশাসনের উপরস্ত কর্তাব্যক্তিগন।
একে একে বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সচিব, হাইকোর্টের বিচারক, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, জেলা পুলিশ কমিশনার, ইউএনও সহ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাগন।
প্রতিনিয়ত শত শত দর্শনার্থী ভীড় জমালেও সৈকতটির উন্নয়নে সরকারী ভাবে তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। তবে সমুদ্র সৈকতটিকে সরকারীভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষনা করে মন্ত্রনালয়ের অধীনে দৃশ্যমান উন্নয়নের দাবী এলাকাবাসীর। এ ব্যাপারে মূল উদ্যোক্তা দক্ষিন সাকুচিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ অলিউল্লাহ কাজল জানান, মনপুরা দখিনা হাওয়া সী-বিচ’র সৌন্দর্য বর্ধনে স্বেচ্ছাসেবীদের সহযোগীতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সরকারী অনুদানে সী-বিচের পাকা গেইট নির্মানের কাজ চলছে। এছাড়াও পর্যটন সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্প জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। সী-বিচটিকে সরকারী ভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে ঘোষনা করে দ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দাবী জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি শেলিনা আক্তার চৌধুরী জানান, দখিনা হাওয়া সী-বিচে বর্তমানে ব্যক্তিগতভাবে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। আমরা চাই সরকারী ভাবে পর্যটনকেন্দ্র ঘোষনা করে সরকারীভাবে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজকে এগিয়ে নেয়া হোক। সরকার নজর দিলে এটি কক্সবাজার, কুয়াকাটার মতো পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হবে।
সাব্বির আলম বাবু/ইউবি টাইমস