বসনিয়ার শরণার্থী পরিস্থিতি নিয়ে ইইউ’র রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগ প্রকাশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক থেকে,কবির আহমেদঃ ইউরোপীয় ইউনিয়ন,উত্তর-পশ্চিম বসনিয়াতে কয়েক শতাধিক গৃহহীন শরণার্থীর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। “পরিস্থিতিটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য,” বলে জানিয়েছেন বসনিয়ার জন্য ইইউর বিশেষ দূত জোহান স্যাটারেল।

তিনি শনিবার ২ জানুয়ারী বসনিয়ার সুরক্ষা মন্ত্রী সেলমো কিকোটিকের সাথে বৈঠকের পর বলেছেন: “কয়েকশ মানুষের জীবন ও মৌলিক অধিকার মারাত্মক বিপদে রয়েছে।” ইউরোপীয় ভূখন্ডে এমন মানবেতর জীবনযাপন মেনে নেয়া যায় না। লিপার কাছে পূর্বের শরণার্থী শিবিরটি ২৩ শে ডিসেম্বর আগুনে পুড়ে সম্পূর্ণ ভস্ম হয়ে যায়। তবে বসনিয়ার পুলিশ বলছে যে প্রবাসীরা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিবিরটিকে আগুন দিয়েছে। আইওএম সাহায্যকারীরা বড়দিনের আগের দিন শিবির থেকে সরে এসেছিল কারণ এটি পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যুৎ, জল এবং উত্তাপ সরবরাহ করা হয়নি। লিপার শিবিরটি এপ্রিল মাসে অস্থায়ী আবাসন হিসাবে স্থাপন করা হয়েছিল। এই অঞ্চলে শরণার্থীদের জন্য আর কোনও নিয়মিত থাকার ব্যবস্থা নেই।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বসনিয়ার মন্ত্রীর সাথে বৈঠককালে জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং ইতালির রাষ্ট্রদূতগণও উপস্থিত ছিলেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অনুসারে, বৈঠকের সময় শীত ও তুষারে আক্রান্ত শরণার্থীদের জন্য জরুরি ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইইউ কমিশন এবং আইওএম ব্যারাকের একটি পরিত্যক্ত কারখানায় শরণার্থী শিবির আবার চালু করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর বিরোধিতা করছে। গত সপ্তাহে,  কর্তৃপক্ষ শরণার্থীদের দেশটির দক্ষিণের একটি প্রাক্তন ব্যারাকে বাসে করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্ত উদ্বাস্তুরা বাসে উঠে নি,তাই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে বাস ছাড়তে পারেননি, যদিও বাসিন্দারা কর্তৃপক্ষের এই উদ্দ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল।

এদিকে জার্মানির সংবাদ সংস্থা “ডয়েচে ভেলে”DW জানিয়েছেন,ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমালোচনার মুখে অবশেষে মানবিক বিপর্যয় ঠেকাতে ব্যবস্থা নিয়েছে বসনিয়ার সেনাবাহিনী ৷বসনিয়ার সেনাবাহিনী লিপায় ১৫০ সেনাসদস্যের একটি দল তাঁবু নিয়ে পৌঁছেছে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা- আইওএমের তত্ত্বাবধানে তাঁবু স্থাপন ও অভিবাসীদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে ৷ শুক্রবার অভিবাসী ও শরণার্থীরা বিক্ষোভ করেন ৷ ত্রাণ সংস্থাগুলো জানিয়েছে শত শত অভিবাসী তাদের সরবরাহ করা খাবার নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং জীবনযাপনের মান উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনা করে বিক্ষোভ করেন ৷ প্রায় ১২০০ শরণার্থী বাস করছিলেন উত্তর-পশ্চিম বসনিয়ার লিপা শরণার্থী শিবিরে।

২৩ ডিসেম্বর সেই ক্যাম্পে আগুন লেগে যায়। ওইদিনই শিবিরটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। বসনিয়া প্রশাসন এবং শরণার্থী শিবির পরিচালকদের বক্তব্য, ওই ক্যাম্পের মানুষই আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। লিপার শিবির তৈরীর সময়ে বলা হয়েছিল, এই শিবির সাময়িক। ২৩ ডিসেম্বর যে ক্যাম্প গুটিয়ে নেওয়া হবে, তা আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল,অথচ ক্যাম্পে বসবাসকারীরা এই ঠান্ডার মধ্যে কোথায় গিয়ে থাকবেন, সে বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। লিপা ক্যাম্প পুড়ে যাওয়ার পর সারায়েভোর ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের ব্রাডিনা শহরের পুরানো একটি সামরিক ভবনে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে স্থানীয় মানুষ বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। ফলে সেখানে তাদের স্থানান্তর সম্ভব হয়নি।

এখানে উল্লেখ্য যে ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের আশায় বসনিয়ায় এসে আটকা পড়েছেন হাজার হাজার শরণার্থী। এর একটি বড় অংশ বাংলাদেশ থেকে আগত শরণার্থী। এক বেসরকারী খবরে বলা হয়েছে প্রায় ২০০ শত থেকে ৩০০ শত বাংলাদেশী বসনিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।তা ছাড়াও এই দলে আছেন ভারত,পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান ও ইরানের লোকজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »