নতুন বছরে ইইউ দেশগুলোর বৃটেন ভ্রমণে বিধি-নিষেধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক থেকে,কবির আহমেদঃ ২০২১ সালের ১ জানুয়ারীর পর থেকে ভ্রমণ করার সময় ইউরোপের আশেপাশে বসবাসরত ব্রিটিশদেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে জানিয়েছেন ব্রিটিশ সরকারের উদ্ধৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি। তাছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সরকার ইইউ থেকে বৃটেনে লোকদের চলাচলের স্বাধীনতা শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই সম্পর্কে ইইউ আগামী ২০ জানুয়ারী থেকে তার নাগরিকদের বৃটেনে প্রবেশের নতুন আইন কার্যকর করবে।এই পরিবর্তনের মধ্যে থাকছে পাসপোর্টের বৈধতা, সীমান্ত চেক, EHIC কার্ড এবং অবশ্যই প্রবেশের প্রয়োজনীয়তার মতো কিছু বিষয়কে প্রভাবিত করবে।

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ এখন ‘মিউট্যান্ট কোভিড’ বা ইংল্যান্ডের নতুন করোনা ভাইরাসের জন্য বৃটেনের সাথে বিমান যোগাযোগ স্থগিত করেছে। আবার অনেক দেশ বৃটেনের সাথে যোগাযোগ পুনস্থাপন করলেও কোভিড-১৯ পরীক্ষার সনদ সকলের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে। তাই বৃটেন থেকে ইইউ তে আসতে হলে বা যেতে হলে করোনার নেগেটিভ সনদ অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। দ্বিতীয়ত,ব্রেক্সিটের পর থেকে ব্রিটেন এখনএকটি “তৃতীয় দেশ” হয়ে যায় ইইউতে,যার অর্থ এটি মহামারীজনিত কারণে ২০২০ সালের মার্চ মাসে ব্লক এবং শেঞ্জেন অঞ্চলে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হবে। তার মানে যুক্তরাজ্য থেকে আগত পর্যটক এবং দর্শনার্থীদের জানুয়ারী থেকে ইইউতে যাওয়ার অনুমতি নেই। প্রয়োজনীয় ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে যার অর্থ ইইউতে বসবাসকারী যে কেউ বাড়িতে ফিরে আসতে পারেন এবং ইইউর বাসিন্দাদের পরিবারের সদস্যরা ভ্রমণ করতে পারবেন। কাজের কারণে যারা ভ্রমণ করেন তাদেরও ছাড় দেওয়া হবে।

৩১ শে ডিসেম্বরের আগে ব্রিটিশ নাগরিকরা পুরো ইউরোপে অবাধে ভ্রমণ করতে পারত এবং তখন শুধুমাত্র তাদের পাসপোর্টটির মেয়াদ থাকলেই চলতো। যুক্তরাজ্য (বৃটেন) সরকার বলেছে, “১ লা জানুয়ারীর পর থেকে আপনাদের বয়স্ক পাসপোর্টের বা শিশু পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস বাকি থাকতে হবে ইউরোপের বেশীরভাগ দেশে (আয়ারল্যান্ড ব্যতীত) ভ্রমণ করার জন্য।” তবে আপনার ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবাসভূমির দেশে “প্রবেশ করা বা স্থানান্তর করা” থাকলে এই প্রয়োজনীয়তার প্রযোজ্য হবে না। সুতরাং নতুন বৎসরে ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি ইত্যাদিতে ব্রিটিশরা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে তাদের পাসপোর্টে ৬ মাসের কম মেয়াদ থাকলেও তাদের প্রবেশ করতে অসুবিধা হবে না।

যুক্তরাজ্যের সরকার আরও বলেছে,”আপনি যদি আগের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আপনার বর্তমান পাসপোর্টটি পুনর্নবীকরণ করেন তবে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখে অতিরিক্ত মাস যুক্ত করা যেতে পারে। আপনার পাসপোর্টে ১০ বছরেরও বেশী কোনও অতিরিক্ত মাস প্রয়োজনীয় ৬ মাসের মধ্যে গণনা করা হবে না।” তারা আরও বলেছেন “আপনার পাসপোর্টে পর্যাপ্ত সময় না থাকলে ভ্রমণ করার আগে আপনাকে আপনার পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে।”

১ জানুয়ারীর পরে ইউরোপের আশেপাশের বন্দর এবং বিমানবন্দরে ব্রিটিশরা পূর্বের মত স্বাধীনভাবে আর চলাচল করতে পারবে না। ব্রিটিশ ভ্রমণকারীরা সীমান্তে পৌঁছে ইইউর কাতারে যোগ দিতে পারবে না। তাদেরকে এখন থেকে বিদেশীদের কাতারে লাইন ধরতে হবে। “নন-ইইউ জাতীয় হিসাবে, অন্যান্য ইইউ বা শেঞ্জেন অঞ্চল দেশগুলিতে ভ্রমণের সময় বিভিন্ন সমান্তরাল সীমান্তেও চেকের সম্মুখীন হতে হবে এবং আপনাকে রিটার্ন বা আগামীর টিকিট দেখাতে হতে পারে এবং আপনার ইইউতে থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ দেখাতে হতে পারে। যুক্তরাজ্য সরকার আরও বলেছে, “লাইনে দাঁড়ানোর সময় আপনাকে ইইউ, ইইএ এবং সুইস নাগরিকদের পৃথক লেনও ব্যবহার করতে হতে পারে। আপনার পাসপোর্ট এই দেশগুলিতে ভ্রমণের জন্য স্ট্যাম্পযুক্ত সীল মোহরও লাগাতে পারে। তবে আইন অনুসারে সীমান্ত আধিকারিকদের জন্য নন-ইইউ ভ্রমণকারীদের অতিরিক্ত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন হতে পারে,তাই এখন থেকে বৃটিশ নাগরিকদেরও ইমিগ্রেশনে জিজ্ঞাসাবাদের সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। বৃটিশ নাগরিকদের জন্য ইইউতে প্রবেশে নির্দিষ্ট সময়ের সীমাবদ্ধতা থাকবে এবং ব্রিটিশরা সম্ভবত ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে যদি তারা এই সময়সীমা অতিক্রম করতে চান।

যুক্তরাজ্য সরকার বলছেন,”২০ শে জানুয়ারী, ২০২১ থেকে, আপনি পর্যটন যেমন কোনও ভিসা ছাড়াই যে কোনও ১৮০ দিনের সময়কালে ৯০ দিনের(৩মাস) মতো অন্যান্য শেঞ্জেন অঞ্চলের(EU) দেশগুলিতে থাকতে পারবেন। সোজা কথায়,এখন থেকে কোন বৃটিশ নাগরিক পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাস থাকলে ইউরোপী ইউনিয়নে ভিসা ছাড়াই ৩ মাস থাকতে পারবেন। তবে যে সমস্ত বৃটিশ নাগরিকদের ইইউতে বেশী দিন থাকার প্রয়োজন হবে যেমন কাজ করতে বা পড়াশোনা করতে, বা ব্যবসায় ভ্রমণের জন্য, তাদের যে দেশে ভ্রমণ করছেন তাদের দূতাবাসে সেদেশের নির্ধারিত প্রবেশের প্রয়োজনীয়তাগুলি আপনাকে পূরণ করতে হবে। এর অর্থ ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিটের জন্য আবেদন করা হতে পারে। তবে ইউকে এবং আয়ারল্যান্ডে ভ্রমণের বেলায় ইইউর মতো বিধিনিষেধ লাগবে না বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ সরকার।

বৃটিশ সরকার আরও জানিয়েছেন ১ জানুয়ারী থেকে ব্রিটিশ EHIC কার্ড(ইউরোপীয় স্বাস্থ্যবীমা কার্ড) ইইউ দেশ সমূহের মধ্যে আর কার্যকর হবে না। তবে EU- এর পেনশনাররা যারা S1 ধারক এবং EU দেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যবহার চালিয়ে যেতে পারেন তবে তাদের নতুন কার্ডের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit exceeded. Please complete the captcha once again.

Translate »