ইউরোপ ডেস্ক থেকে,কবির আহমেদঃ আজ ১ জানুয়ারী অস্ট্রিয়ার শ্রমমন্ত্রী ক্রিস্টিনে আশবাখের (ÖVP) সংবাদ সংস্থা এপিএর সাথে এক সাক্ষাৎকার বলেন,”যে সমস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের স্বল্প সময়ের কাজ দরকার তারা তা অব্যাহত রাখতে পারবে। শ্রমমন্ত্রী জানান,বর্তমানে চলমান তৃতীয় পর্বের স্বল্প সময়ের কাজ মার্চের শেষে সমাপ্ত হওয়ার পরে,যদি কেহ আরও অব্যাহত রাখতে চায়,তাহলে রাখতে পারবে। আমরা তাদের সাহায্য করবো বলে আশ্বাস দিলেন শ্রমমন্ত্রী ক্রিস্টিনে আশবাখের।
উল্লেখ্য যে,সমস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান স্বল্প সময়ের কাজ করছে তাদের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন সরকার বহন করছে। শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন,দুর্ভাগ্যক্রমে, আমরা দেশের সমস্ত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানকে এই সঙ্কটের মধ্য সাহায্যের ভিতরে আনতে পারিনি। তিনি এপিএ কে জানান, করোনার জন্য ২০২০ সালে অস্ট্রিয়ায় ১১ লক্ষ ৬০ হাজার মানুষ স্বল্প সময়ের কাজ করেছে। এই পর্যন্ত সরকারের পাবলিক এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিস (AMS) করোনার স্বল্প সময়ের জন্য প্রায় ৫.৫ বিলিয়ন ইউরো প্রদান করেছে এবং প্রায় ১০ বিলিয়ন ইউরো অনুদান অনুমোদিত হয়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারীটির বিকাশের উপর নির্ভর করে স্বল্প সময়ের কাজের মডেলটিকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য শ্রম মন্ত্রনালয়,সামাজিক অংশীদার এবং অর্থনৈতিক গবেষকদের মধ্যে আলোচনার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান শ্রমমন্ত্রী আশবাখের। কি ধরণের স্বল্প সময়ের কাজ আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উন্নয়নের উপর নির্ভর করে। এটি করোনার স্বল্প সময়ের কাজের চতুর্থ পর্ব হোক বা দীর্ঘ মেয়াদে করোনার স্বল্প সময়ের কাজ হোক, আমি এই মুহূর্তে অবশ্য বলতে পারছি না। “ইইউ রাষ্ট্রীয় সহায়তা আইনের উপর নির্ভরশীল” পরিবর্তনগুলি কীভাবে পরিণত হবে তা এখনও উন্মুক্ত।
শ্রমমন্ত্রী বলেন,”যদি আমরা এই খাতকে স্বল্প সময়ের কাজেই সীমাবদ্ধ রাখতাম তবে আমরা ইইউর রাজ্য সহায়তা আইনের উপর নির্ভরশীল থাকব। আমরা যদি এরকম কিছু নিয়ে চিন্তা করি তবে আমাদের খুব সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে,” শ্রমমন্ত্রী বলেন, গত অক্টোবরের পর থেকে, সংস্থাগুলি লেবার সার্ভিসে (AMS) মার্চ ২০২১ এর শেষ নাগাদ করোনার স্বল্প সময়ের কাজের তৃতীয় ধাপের জন্য আবেদন করতে সক্ষম হয়েছে। মানদণ্ডটি আরও কড়া করা হয়েছে, উদাহরণস্বরূপ আরও কাজ করতে হবে এবং সংস্থাগুলিকে কাজের সময় হ্রাসের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্থ কর্মীদের জন্য কোনও পরিবর্তন হয়নি: তারা তাদের আয়ের উপর নির্ভর করে তাদের নিট বেতন বা মজুরির ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অব্যাহত রেখেছেন।
এই বৈশ্বিক মহামারী করোনার জন্য সম্পূর্ণ লকডাউনের ফলে অস্ট্রিয়ায় রেকর্ড বেকারত্ব সৃষ্টি করেছে। ২০২০ সালের এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ৫,৮৮,০০০ হাজার মানুষ কাজ ছাড়াই ছিল, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেকারত্ব বেড়েছে ২,১০,০০০ হাজার। গত সেপ্টেম্বর মাসে বেকারত্বের সংখ্যা হ্রাস পেয়ে ৪,০৪,০০০ হাজার হয়েছিল। কিন্ত করোনার তৃতীয় লকডাউনের ফলে এই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ডিসেম্বর মাসে বেড়ে ৪,৯৪,০০০ হাজারে এসে দাঁড়িয়েছে। শ্রমমন্ত্রী আশঙ্কা করে বলেন,খুব শীঘ্রই দেশের বেকারত্বের সংখ্যা পাঁচ লক্ষে পৌঁছে যাবে। শ্রমমন্ত্রী আরও বলেন, করোনার প্রভাব ছাড়াও শীতকালে অস্ট্রিয়ায় বেকারত্ব ঐতিহ্যগতভাবে এমনিতেই বেশী। মৌসুমের উপর নির্ভর করে নির্মাণ শিল্প তাই শীতকালে বেকারত্বের জন্য নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সমূহ তাদের কর্মীদের পাঠায় AMS এ। আমরা এই ব্যাপারে ওয়াকিবহাল আছি। শ্রমমন্ত্রী করোনার ভ্যাকসিনটি ব্যাপকভাবে প্রয়োগের সাথে সাথে দেশের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার হলে আবারও শ্রমবাজারে স্থিতিশীল অবস্থা ফিরে আশার প্রত্যাশা করেন। শ্রমমন্ত্রী ক্রিস্টিনে আশবাখের সবশেষে সকলকে করোনার পরবর্তী ফ্রী গণ পরীক্ষায় সকলকে অংশগ্রহণের অনুরোধ করেছেন।
এদিকে আজ অস্ট্রিয়ায় করোনায় নতুন করে সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ২,০৯৬ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৩৯ জন। রাজধানী ভিয়েনায় আজ নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন ৩৪১ জন। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে NÖ রাজ্যে ৪০৮ জন,Salzburg রাজ্যে ৩৫১ জন, OÖ রাজ্যে ২৮৪ জন,Steiermark রাজ্যে ২১৯ জন, Voralberg রাজ্যে ১৫৩ জন,Kärnten রাজ্যে ১৪৩ জন, Tirol রাজ্যে ১৩৬ জন এবং Burgenland রাজ্যে ৬১ জন নতুন করে করোনায় সংক্রমিত সনাক্ত হয়েছেন।
অস্ট্রিয়ায় এই পর্যন্ত করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩,৬২,৯১১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ৬,২৬১ জন। করোনার থেকে এই পর্যন্ত মোট আরোগ্য লাভ করেছেন ৩,৩৪,৯০১ জন। বর্তমানে করোনার সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ২১,৭৪৯ জন। এর মধ্যে আইসিইউতে আছেন ৩৮৫ জন এবং হাসপাতালে ভর্তির আছেন ২,২৪৩ জন। বাকীরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে আছেন।