ভিয়েনা থেকে,কবির আহমেদঃযুক্তরাজ্য বুধবার ৩০ ডিসেম্বর ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত আবিষ্কৃত ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়েছেন। সকালে বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বৃটিশ হেলথ সেক্রেটারি Matt Hancock এই তথ্য জানান। যুক্তরাজ্য ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা থেকে ১০ কোটি ভ্যাকসিন ডোজ চেয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে বলা হয়েছে।
এই অনুমোদনের অর্থ হচ্ছে যুক্তরাজ্যের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন ভ্যাকসিনটি নিরাপদ এবং কার্যকর। বাংলাদেশ সরকার ইতিপূর্বেই জানিয়েছেন যে,তারা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে এই ভ্যাকসিনটি বাংলাদেশে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এবং চুক্তি করেছেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই ভ্যাকসিনটি ২০২০ সালের প্রথম দিকেই তৈরী করা হয়। এপ্রিলে প্রথমবারের মত কোন স্বেচ্ছাসেবীর উপর প্রথম প্রয়োগ করা হয় এবং পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী হাজার-হাজার মানুষের উপর ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল সফল ট্রায়াল করা হয়েছে।
করোনার মহামারীর শুরুর পর পরই অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা বৃটিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা মিলে এই ভ্যাকসিন তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যেই গতিতে এই ভ্যাকসিনটি উদ্ভাবন করা হয়েছে তা মহামারির আগে অচিন্তনীয় ছিল। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দ্বিতীয় কোন ভ্যাকসিন হিসেবে এটি যুক্তরাজ্যে অনুমোদন পেল। এর আগে ডিসেম্বরেই ফাইজার-বায়োঅ্যানটেকের ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছিল দেশটি। যুক্তরাজ্যে এরই মধ্যে ৬ লক্ষ মানুষকে ভ্যাকসিন দিয়েছেন,তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়ার ফলে ভ্যাকসিন দানের গতি বেশ খানিকটাই বেড়ে যাবে কারণ এই ভ্যাকসিনটি স্বল্পমূল্যের এবং সহজেই উৎপাদন করা যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, এই ভ্যাকসিনটি সাধারণ ফ্রিজেই সংরক্ষণ করা যায়, যেখানে ফাইজার-বায়োঅ্যানটেকের ভ্যাকসিনটি সংরক্ষণ করতে হয় -৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
কিভাবে এই ভ্যাকসিন কাজ করে? শিম্পাঞ্জিদের সংক্রমিত করতে পারে এমন একটি সাধারণ ঠান্ডা-জ্বরের ভাইরাসের মধ্যে জিনগত পরির্তন এনে এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করা হয়েছে। এটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে যাতে এটি মানবদেহে সংক্রমণ ঘটাতে না পারে এবং এর মধ্যে রয়েছে করোনাভাইরাসের মূল নকশার একটি অংশ, যা কিনা ‘স্পাইক প্রোটিন’ নামে পরিচিত। যখনি এই মূল নকশাটিকে শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখনি সেটি মানবদেহে স্পাইক প্রোটিন তৈরি করতে শুরু করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তখন এটিকে একটি হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এটিকে ধ্বংস করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে যখন ঐ ব্যক্তি আসল ভাইরাসে আক্রান্ত হবে, তখন তার শরীর আগে থেকে জানবে, কিভাবে এই ভাইরাসটিকে প্রতিরোধ করা যায়।