ইতালি থেকে,নিজস্ব প্রতিনিধিঃবেশীরভাগ ইউরোপীয় দেশসমূহ যখন বয়স্ক ঝুঁকিপূর্ণ লোকজনদের ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে কর্মসূচির উদ্বোধন করছে,ইতালি সেখানে ব্যতিক্রম ভাবে শুরু করলো। রবিবার ২৭ ডিসেম্বর অধিকাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশের সাথে ইতালিও বায়োএনটেক ও ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করেছে।
রোমের স্পাল্লানজানী হাসপাতালে প্রথম করোনার ভ্যাকসিন নেয় পাঁচ জন স্বাস্থ্যকর্মী। সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, একজন ২৯ বৎসর বয়স্ক নার্স ক্লাউডিয়া আলিভেরনিনিকে প্রথম ইতালিয়ান হিসাবে করোনার ভ্যাকসিন ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে প্রয়োগ করা হয়েছে। তারপর তার সাথে একজন ভাইরোলজির অধ্যাপক এবং তিনজন সামাজিক স্বাস্থ্যকর্মী করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেন।
ইতালির প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণের অধিকারিনী হিসাবে তার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার পর আজ আমি ও আমরা এই ভ্যাকসিন পেয়েছি এবং আমি এই ভ্যাকসিন নিজের শরীরে নিয়ে আরও গভীর দায়বদ্ধতার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছি। আজ এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা নতুন আশার আলোয় প্রবেশ করেছি। আমাদের চলার পথ দীর্ঘ হলেও এর শেষও এখন আমাদের দৃষ্টির সামনে দেখতে পাচ্ছি।
ইতালি অন্যান্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশের মতোই প্রথম চালানে করোনার ভ্যাকসিনের ৯,৭৫০ টি ডোজ পেয়েছে। অবশ্য আগামী সপ্তাহে আরও ৪,৭০,০০০ হাজার ভ্যাকসিন ডোজ আসার কথা রয়েছে।
ইতালির জাতীয় করোনাভাইরাস কমিশনার ডোমেনিকো আর্কুরি ইউরোপে করোনা মহামারীর সংক্রমণ বিস্তার রোধে এই ভ্যাকসিন বা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী মুহূর্ত হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তিনি আরও বলেন,আজকের দিনটি একটি ঐতিহাসিক দিন হিসাবে ইউরোপের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে। অধিকাংশ ইইউ দেশে ভ্যাকসিন শুরু করায় এক বিবৃতিতে ইইউ প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন বলেন,ভ্যাকসিন প্রদানের শুরুর দিনটি ইউরোপের একটি ঐতিহাসিক এবং সাফল্যের দিন হিসাবে ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে।
ইইউ ৬ টি ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফাইজার-বায়োএনটেক এর ভ্যাকসিন ছাড়াও অন্যান্য ভ্যাকসিনগুলিও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে গত সপ্তাহে জৈব প্রযুক্তি সংস্থা মোদার্নার ভ্যাকসিনকে অনুমোদন দিয়েছে এবং প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ এই ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন।
অন্যদিকে বৃটেনে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় এবং ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা তাদের কোভিড -১৯ এর ভ্যাকসিন বের করার অনুমতির জন্য যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পাস্কাল সরিওট রবিবার “সানডে টাইমসকে” বলেছেন, তাদের ভ্যাকসিনটি একটি “বিজয়ী সূত্র” এবং গুরুতর কোভিডের বিরুদ্ধে “১০০ শতাংশ সুরক্ষা” নিশ্চিত করবে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপ্পে কন্তে,কোভিড-১৯ এর এই “V-Day”(ভ্যাকসিন দিবস) উপলক্ষে এক বার্তায় বলেন, করোনা ভাইরাসের এই ভ্যাকসিন বা টিকা আগামী দিনে ইতালির জন্য সুফল বয়ে আনবে। ইতালির প্রতিটি প্রদেশে যেন করোনার এই ভ্যাকসিনটি সঠিকভাবে পৌঁছে দেয়া হয়,তা নিশ্চিত করতে ইতালির কেন্দ্রিয় স্বাস্থ্য প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।